Translate

Sunday, July 28, 2013

’৯০-এর ছাত্রনেতাদের ৮০ ভাগই কোটিপতি

’৯০-এর ছাত্রনেতাদের ৮০ ভাগই কোটিপতি
  • কেন আমরা একজন মাথতির বা আরেক এক জন জিয়া বা মুজিব  পাব না !
  • কেন এমন হবে, আমাদের রাজনীতিবিদদেশ দেশ প্রেম থাকবে না!
  • রাজনীতি কেন ব্যবসা কেন্দ্র হবে ! 
  • দুর্নীতি মুক্ত দেশ কি আমরা পাব না!
  • আর কত দিন আমরা রাজনীতি নিয়ে হতাশায় থাকব।

  ’৯০-এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের ৮০ ভাগই এখন কোটিপতি। কেউ বিদেশ গিয়ে অর্থ কামিয়েছেন, কেউ মন্ত্রী-এমপি হয়ে অর্থ বানিয়েছেন, কেউ ব্যবসা করে সম্পদ গড়েছেন, আবার কেউ ক্ষমতার প্রভাবে  টেন্ডারবাজী, ঠিকাদারী, ব্রকারী, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য করে সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা এখন দামী গাড়িতে চলাফেলা করেন। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৬/৭ জন ছাত্রনেতার কোনো পরিবর্তন আসেনি। তারা আগের মতোই আর্থিক সংকটে দিনযাপন করছেন। ’৯০ ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা আর্থিক সংকটের কারণে বিনা চিকিৎসায় মারাও গেছেন। এইচ এম এরশাদকে স্বৈরাচার, দুর্নীতিবাজ, তাঁর সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিহিত এবং ১১ ব্যক্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করে ছাত্রনেতারা সেসময় ‘বাহবা’ নিয়েছেন। অথচ পরবর্তীতে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সাবেক ছাত্রনেতাদের কারো কারো ঢাকায় ১০ থেকে ১৫টি ফ্লাট রয়েছে বলেও প্রচারণা আছে। নিশান  প্রোট্রোল, প্রাডো ব্যবহার করেন। ৩/৪টি গাড়ী ব্যবহার করেন এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়।
’৯০-এর আন্দোলনের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠন করা হয়। ডাকসুকে কেন্দ্র করে গঠিত এ ছাত্রঐক্যের শরীক ছিল ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপ, ছাত্রদল, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রঐক্য ফোরাম, গণতান্ত্রিক ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ইত্যাদি ছাত্রসংগঠন। ’৯০-এর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে এসব সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাত্রনেতাদের ‘ক্লিন ইমেজ’ সে সময় রাজধানীর মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সেই ছাত্রনেতাদের অনেকের ‘ক্লিন ইমেজ’ ‘ময়লা আবর্জনা’য় ভরে গেছে। এমনকি ছাত্রনেতারা সে সময় যে ১১ প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করেন পরবর্তীতে কয়েকজন ছাত্রনেতা তাদের (শত্রু) সহায়তায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে কোটিপতি হন এবং রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে সেই ছাত্রনেতারা এখন দুই ধরায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায়ই দেখা যায়, সেই ছাত্রনেতাদের কেউ বিএনপির পক্ষে ’৯০-এর ছাত্রনেতা হিসেবে বিবৃতি দেন; আবার কেউ আওয়ামী লীগকে সমর্থন হিসেবে বিবৃতি দেন। তারা ’৯০-এর ছাত্রনেতার ‘সার্টিফিকেট’ এখনো বেশ সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান ছিলেন ডাকসুর ভিপি। তিনি ঢাকা-৩ কেরানীগঞ্জ থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। এমনকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তার অসুস্থ স্ত্রীকেও জেলে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। তিনি এখন প্রচুর বিত্তবৈভবের মালিক বলে দলে প্রচারণা রয়েছে। হাবিবুর রহমান হাবিব এখন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ’৯০-এ ছিলেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম এ সাবেক ছাত্রনেতা ’৯৪ সালে মুজিব কোট খুলে সাফারি পরে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি ধানের শীষ নিয়ে পাবনার একটি আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসিম কুমার উকিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা এখন কোটিপতি এবং দলে প্রভাবশালী। ব্যবসা, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে ফুলেফেঁপে উঠেছেন। তিন বছর আগে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে ‘ইতিবাচক’ বক্তৃতা দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে নিগৃহীত হলেও তার স্ত্রী অপু উকিল বর্তমানে এমপি। সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার নিয়ে আপত্তিকর বক্তৃতা দিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত (!) হয়ে গেছেন। ডাকসুর জিএস ছিলেন খায়রুল কবির খোকন। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নরসিংদীর একটি আসনে উপনির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে তিনি ব্যবসা করছেন। তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও বিগত নির্বাচনে ঢাকার একটি আসনে (সাবের চৌধুরীর বিরুদ্ধে) ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছেন। ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল হক মিলন বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। অষ্টম জাতীয় সংসদে গাজীপুরের কালিগঞ্জ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলেও বিগত নির্বাচনে পরাজিত হন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে ‘ভাগ্য’ ফিরিয়েছেন। বিএনপির বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিষয়ক নাজিমুদ্দিন আলম সে সময় ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ভোলার একটি আসন থেকে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আসনে শরীক দলের নেতাকে নমিনেশন দেয়া হয়। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা করে ‘আখের’ গুছিয়েছেন। বাসদ মাহবুব সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতা সাহাবুদ্দিন দীর্ঘদিন আমেরিকায় ছিলেন। সেখান থেকে কোটিপতি হয়ে দেশে ফিরে এসে সমাজতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যোগদান করেন। বুর্জোয়া রাজনীতির ভোগবাদী নেতা হিসেবে তিনি এখন পরিচিত। গণতান্ত্রিক ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমদ মনি বর্তমানে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। রাজনীতি আর দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই তার জীবন যাপন। এখনো ‘দিন আনে দিন খাওয়ার’ মতো আর্থিক অবস্থার এই নেতা বিয়ে করেননি। জাগপা করতেন ’৯০ এর ছাত্রনেতা মিরাজ আব্বাসী। পরে ডেমোক্রেটিক লীগ করেন এবং চরম আর্থিক সংকটে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ’৯০ আন্দোলনের পর অনেককে মন্ত্রী-এমপি, দলের এবং প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়োগের মাধ্যমে পদপদবি এবং কোটিপতি হলেও মৃত্যুর সময় কেউ মিরাজ আব্বাসীর খোঁজখবর নেননি। জাসদ ছাত্রলীগের নেতা নাজমুল হক প্রধান বর্তমানে জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বর্তমানে প্রভাবশালী মন্ত্রী। তিনি ক্ষমতা ‘ভোগ’ করছেন ভালভাবেই। ছাত্রলীগ নেতা শফি আহমদ বিগত নির্বাচনে নেত্রকোনা থেকে আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছিলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করে তিনি কোটিপতি হয়ে ‘বেশ’ আছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের  সেদিনের নেতা মোস্তফা ফারুক এখন কোটিপতি বলে জানা গেছে। বজলুর রশিদ ফিরোজ এখন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা। কিছুদিন আগেও দলীয় প্রধান খালেকুজ্জামানের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তার নামে দলীয় কার্যালয়ের জমি লিখে নেয়ার খবর পত্রিকায় বের হয়। গণতান্ত্রিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন তরুণ বর্তমানে অষ্ট্রিয়ায় রয়েছেন। দেশের দ্বিদলীয় রাজনীতির উপর ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ‘কিছু করার জন্য’ বিদেশ পাড়ি জমান। দীর্ঘ ১১ বছর থেকে অষ্ট্রিয়ায় রয়েছেন এবং বর্তমানে কোটিপতি। ছাত্রঐক্য ফোরামের নেত্রী মোশরেফা মিশু বর্তমানে বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আজিজ মার্কেটে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি এনজিও করেন এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন সে সময়। কমিউনিস্ট নেতার সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার কয়েক বছর পর তিনি দেশে ফিরে এসে ‘সমাজতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে’ বিএনপিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিগত দুটি নির্বাচনে তিনি জামালপুরের একটি আসনে নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ জলিল বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে ব্যবসা করে ‘অর্থ’ বানিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে দিনাজপুর থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দোজা রাশিয়া ও ইউরোপে কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে দেশে থাকলেও আর্থিক ভাবে বেশ সম্পদশালী। ওয়ার্কার্স পার্টির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। রাজনীতির পালাবদলের স্রোতে ভেসে তিনি ‘পিকিং পন্থী সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে’ বিএনপিতে যোগদান করেন। বর্তমানে বিএনপির সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদে বরিশাল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক নূর আহমদ বকুল এখন ওয়ার্কার্স পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফয়জুল হাকিম লালা বর্তমানে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়াও আরো কয়েকজন নেতা ’৯০ ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নানা পন্থায় নিজেদের ‘ভাগ্য’ গড়ে তুলেছেন। ’৯০-এর পরবর্তী সময়ের ছাত্রনেতাদেরও অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন।
সূত - স্টালিন সরকার : দৈনিক মানবজমিন

0 comments:

Post a Comment