বেকারত্ব ঘোচাতে আউটসোর্সিং
বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস'ান আশাব্যঞ্জক। দেশের অনেক তরুণ লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে। অনেকেই দেশের শীর্ষস'ানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে চাকরির আশায় না থেকে আউটসোর্সিং শুরু করছে।
আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতে গিয়ে অনেকে নতুন নতুন প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইনিং ও গ্রাফিক্সের কাজ শিখছে। এতে প্রকৃতপক্ষে তরুণদের সামর্থ্য দিন দিন বাড়ছে। যার প্রতিফলন দেখা যাবে অদূর ভবিষ্যতে। লিখেছেন মামুন আল করিম
শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও অনেকে আউটসোর্সিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে এই তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করছে, তাতে আগামী কয়েক বছরে তা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ স'ান দখলকারী গার্মেন্ট শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি বছরই এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
দেশের তরুণেরা আউটসোর্সিংয়ের কাজে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অন্যান্য শিল্পে অদক্ষ শ্রমিক হলেও কাজ চলছে তবে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে এ চিত্রটি পুরোপুরি উল্টো। এখানে যে যত বেশি দক্ষ, তার কাজ তত বেশি। বিদেশী বায়াররা কোনো জব বা কাজ পোস্ট করার পর দেশের তরুণরা অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে বিড করে ইন্টারভিউ দিয়ে বায়ারদের মানসম্মত কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন দেশের তরুণরা।
আউটসোর্সিং শুরু : নিজের কাছে কাজটি ভালো লাগলে যত দ্রুত সম্ভব শুরু করতে হবে। যত আগে শুরু করবেন তত আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে, কাজ বাড়বে সর্বোপরি নিজেও প্রস'ত হবেন বড় কাজের জন্য। আউটসোর্সিংয়ের জন্য অনলাইন যোগাযোগটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পোর্টফোলিওটা ভালো হতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। একবার কোনো কাজ সময়মতো ও সঠিকভাবে করতে না পারলে পরে ওই ফ্রিল্যান্সারের কাজ পেতে সমস্যা হবে। এ জন্য খুব বেশি স্বচ্ছতার সাথে প্রতিটি কাজ করে যেতে হবে।
সফল হওয়ার সম্ভাবনা : আউটসোর্সিং হলো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেয়া। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান যে ধরনের কাজ করতে চান সেটা কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যারা সেই কাজ করতে আগ্রহী তারা টেন্ডারের মাধ্যমে অংশ নেন কাজ পাওয়ার জন্য। তবে এ জন্য যে আউটসোর্সিং করবে তার দক্ষতার এবং অভিজ্ঞতার পরিচিতি তুলে ধরা, কী কী সুযোগ আছে সেগুলো জানানো এবং প্রতিযোগিতামূলক দাম নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা। প্রতিষ্ঠানটি এক দিকে আপনার কাজ ঠিকভাবে করার যোগ্যতা আছে কি না এবং অন্য দিকে কম দামে কাজটি করানো যাবে কি না তা নিয়ে চেষ্টা করবে। এই দুই শর্ত পূরণ করলে আপনি কাজ পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার, ওডেস্ক ইত্যাদি এ ধরনের সাইট আপনার এবং কাজ করাতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগসূত্র স'াপনের কাজটি করবে। আউটসোর্সিং লাভজনক এতে কোনো সন্দেহ করার অবকাশ নেই। তবে এ জন্য প্রস'তি থাকতে হবে। যদি কোনো কাজে প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন মনে করে তবে এখন শুরু করে পাঁচ বছর পর সেই কাজটি পাবেন। এ জন্য যদি আউটসোর্সিং করতে চান তাহলে সময় ব্যয় না করে এখনই কাজে হাত দিন।
বিষয় নির্ধারণ : আউটসোর্সিংয়ের সফলতার ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বা পছন্দের বিষয় অনুসারে কাজ খুঁজে বের করতে হবে। একজন ফ্রিল্যান্সারের প্রথম কাজ হলো তিনি কোনটি করবেন সেটি আগে নির্ধারণ করা। কারণ তাকে আন-র্জাতিক বাজারে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিড করে কাজ পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকলে নতুন বিষয়ে কাজ নেয়া ঠিক নয়। আউটসোর্সিংয়ে সফলতার মূলমন্ত্র হলো মেধা ও দক্ষতা। আর সবচেয়ে বেশি থাকতে হবে ধৈর্য। সংশ্লিষ্ট কাজের পাশাপাশি ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডেডলাইনের দিকে নজর রাখতে হবে।
কাজের ক্ষেত্র : আউটসোর্সিংয়ে ভালো করতে হলে ভালো ফ্রিল্যান্সিং সাইটে কাজ করা উচিত। ওডেস্ক এ রকম একটি বিশ্বস্ত সাইট। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেস হিসেবে পরিচিত। এ সাইটটিতে সময়ভিত্তিক বরাদ্দকৃত মূল্যের মাধ্যমে কাজ করা যায়। এখানে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ব্লগ রাইটিং বা আর্টিক্যাল রাইটিং, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কাস্টমার সাপোর্ট, সেলস মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিনামূল্যে নিবন্ধনের মাধ্যমে বিড শুরু করা যায়। সাইটটির ঠিকানা www.odesk.com। ওডেস্ক ছাড়াও আরেকটি জনপ্রিয় সাইট হলো ফ্রিল্যান্সার ডটকম। এ সাইটটিতে বর্তমানে ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ২২০ জনেরও বেশিসংখ্যক মানুষ কাজ করছেন। সাইটটিতে ঘণ্টাভিত্তিক এবং বরাদ্দকৃত মূল্যে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল, আর্টিক্যাল রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, সফটওয়্যার ডিজাইন, অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইনসহ ২০০-এর বেশি ক্যাটাগরিতে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ সাইটটির ঠিকানা : www.freelancer.com। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি সাইট রয়েছে এসব সাইটেও কাজ করতে পারেন তবে সবার আগে সাইটের প্রোফাইল যাচাই করে নিন।
ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে : গার্টনারের জরিপে দেখা গেছে, দেশের তরুণেরা আউটসোর্সিংয়ে পিছিয়ে থাকার পেছনে ইংরেজি নিয়ে দুর্বলতা দায়ী। ১৬ বছর ইংরেজি পড়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি কমিউনিকেশনের যে অবস'া হয় তা বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আশানুরূপ নয়। আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে ইংরেজি যে একটি টুল সেটি অনেকে বুঝতে চান না। এ জন্য ইংরেজি নিয়ে আমাদের দুর্বলতা আছে এমন চিহ্নিত অংশগুলো আমরা উন্নত করতে পারলে আউটসোর্সিংয়ে র্যাংকিংয়ে আমরা অচিরেই শীর্ষে পৌঁছাব। যেহেতু বিদেশী বায়ারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হতে পারে সে জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে।
বেকারত্ব দূরীকরণে : দেশের প্রেক্ষাপটে আউটসোর্সিং এখনো শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে ফ্রিল্যান্স ওয়ার্কারের সংখ্যা যেভাবে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাতে আউটসোর্সিং অচিরেই হয়তো শিল্পের পর্যায়ে যাবে এমনটাই মনে করছেন দেশের প্রযুক্তিবিদেরা। এতে করে দেশের তরুণেরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হচ্ছে এবং যে বিষয়ে কাজ করছে সে বিষয়ে তার দক্ষতাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যদিও এ সেক্টরটি এখনো যথাযথভাবে সরকারের সুদৃষ্টি পায়নি। বর্তমানে প্রযুক্তি খাতে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে সেগুলো সরকারের অজানা কিছু নয়। এই সেক্টরে খুব কম পুঁজি বিনিয়োগ করে অনেক বেশি লাভবান হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস'ানের সহায়ক হতে পারে আউটসোর্সিং।
প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন : দেশের তরুণেরা আউটসোর্সিংয়ের কাজে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হলো দেশের ইন্টারনেট ব্যবস'াপনা। বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটি সহজে ইন্টারনেট পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ জেলা শহরে ইন্টারনেটের সুবিধা তেমন একটা নেই। যা আছে তা-ও তেমন গতিময় নয়। এর সাথে ঘন ঘন লোডশেডিং তো রয়েছেই। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৮১ লাখ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আরো বাড়ানো গেলেই দেশের তরুণসমাজকে আউটসোর্সিংয়ে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যাবে।
প্রতারণা থেকে সাবধান : আউটসোর্সিং অনেকের কাছেই রহস্যময়। কেউ এটা নিয়ে বিশাল সম্ভাবনার কথা বলছেন, একই সময়ে অনেকে একে সন্দেহের চোখে দেখছেন। কেউ বলেন, এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সফল হওয়া তো বটেই, সমাজের এবং দেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে পারে। সেটা হয়েছে অনেক দেশে। আর এ সুযোগে ইন্টারনেটে ডলার আয় করার সুবর্ণ সুযোগ। মাত্র আধা ঘণ্টায় ৫০টি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই প্রতিদিন এক ডলার আয়। মাস শেষে ৩০ ডলার। এ ধরনের লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন জায়গায় অফিস রয়েছে। এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না।
[Collected from- মামুন আল করিম (Naya diganto, 17/03/12)]
উদ্দীপনামূলক পোষ্ট। আপনার কাছ থেকে রেগুলার পোষ্ট আশা রাখি। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
ReplyDeleteExcellent tips for beginners freelancer.
ReplyDelete