- সাবধান ফলে বিষ -
যে ফল আপনি খাচ্ছেন বা বাচ্চাকে দিচ্ছেন,
তা কি নিরাপদ,
তাতে কোনে বিষ বা ফরমালিন নেই ?
বাজারে বাহারি মৌসুমি ফল। নজরকাড়া রং। টকটকে লাল কিংবা গাঢ় হলুদ। মৌ মৌ গন্ধ। চোখ জুড়িয়ে যায়। রমজানে এসব ফলের কদর বেশি। বেশি দাম দিয়েও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে এই ফল গাছ পাকা ফল নয়। এ ফলে মাছি কিংবা মৌমাছি কোনোটাই বসতে দেখা যায় না। চোখে পড়ে না, দেখা মেলে না পিঁপড়ারও। এর কারণ এসব ফলে কার্বাইড ও ফরমালিন মেশানো আছে। কেমিক্যালের নামে বিষ মিশিয়ে এই ফল বিক্রি হচ্ছে সারাদেশের শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শুধুমাত্র ফলের পচন এড়াতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহে ক্যান্সারবাহী এই বিষাক্ত কেমিক্যাল। আর বিষ মেশানো এসব ফল খাচেছ দেশের কয়েক কোটি মানুষ। প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সামনেই চলছে এই বিষ মেশানোর কাজ। কিন্তু কারোরই নেই সেদিকে নজর। এছাড়া যারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারাও এই বিষ খাচ্ছেন। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের দু’একটা অভিযান দেখা গেলেও তা শুধুমাত্র লোক দেখানো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক এই পদার্থ (বিষ) ব্যবহারে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনির রোগ, লিভার সিরোসিস এবং নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে ভেজাল এই ফলমূল খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুরও জন্ম হতে পারে। এ থেকে প্রতিকার পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাজারে ফল-মূল দেখে-শুনে কিনতে হবে।
সরকার গত বছর ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোন কাজ হয়নি। এদিকে গত ১ জুলাই মন্ত্রীপরিষদের সভায় ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ এর খসড়ায় খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজার মেয়াদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে, অর্থাৎ ১৪ বছর। যদিও এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
এক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযানে সাড়া জাগানো ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনসচেতনতা মূলত সৃষ্টি করেছে দেশের গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই মানুষ সচেতন হয়েছে। এর পেছনে মিডিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আরো সচেতন হবে। পাশাপশি জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশ, জনগণ ও জাতির স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
র্যাবের মেজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, আইন আছে। অপরাধ করলে আমরা সাজা দেই। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। অপরাধ করার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে এসিডের মতো ‘খাদ্যে রাসয়নিকদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন’ তৈরির বিষয়ে কথা হয়েছে। এটা হলে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কাবাইড, ডিডিটি, হাইড্রোজ, টেক্্রটাইল রং এর উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়, বিক্রয় ও মজুদ করলেই ব্যবস্থা। এ আইন হওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাজারে যাতে এসব ফরমালিন সহজলভ্য না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রিভেনটিভ অ্যাকশন নিতে হবে।
ক্যাব সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, এ দেশে আদালতের যে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা, তা এড়াতেই ভোক্তারা মামলার ঝামেলায় যেতে চায় না। বর্তমানে মোবাইল কোর্ট আইনের প্রয়োগের কারণে কিছুটা অগ্রগতি ঘটলেও জনসচেতনতা তৈরিতে আরো সময় লাগবে। একই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ফরমালিন ব্যবহারের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন।
সূত্র মতে, ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (বিষ) মেশানো হয়ে থাকে আর আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক রং। পরে জনসাধারণের অজান্তেই তা বাজারজাত করা হচ্ছে। আম পাকার পর পচন রোধকল্পে নিয়মিত ফর্মালিন স্প্রে করে বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।
পল্টন বায়তুল মোকাররমের উল্টো পাশের ব্যবসায়ী কামাল জানান, ফলে ফরমালিন আছে কিনা বলতে পারব না। আমরা আড়ৎ থেকে আনি, তারা ভালো বলতে পারবেন। ব্যবসায়ী রতন জানান, রাজশাহী থেকে আম আসতে ধাপে ধাপে বিক্রি পর্যন্ত সপ্তাহ চলে যায়, তাই টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় মেডিসিন দেয়া হতে পারে। শুধু আম নয়; এই তালিকায় আছে আনারস, কাঁঠালসহ কয়েক ধরনের মৌসুমি ফল। অনেকেই না জেনে পকেটের টাকা খরচ করে প্রিয় মানুষদের নিয়ে যাচ্ছেন এই বিষ!
রোজায় বড় একটি চাপ পড়ে ফলের ওপর। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, কলা, আপেল, মালটা এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কেমিক্যালমুক্ত আম বলে অনেক স্থানে ঘোষণা দিয়ে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ দোকানে বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল। কেমিক্যাল ব্যবহার করে দ্রুত পাকিয়ে এসব পণ্য বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
রমজান উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিনে বিএসটিআই’র ভেজালবিরোধী অভিযানে এর সত্যতা মিলেছে। রাজধানীর যে দোকানে যাওয়া হয়েছে, সেখানেই মিলেছে বিষ মেশানো ফলের সন্ধান। ঢাকার সবচেয়ে বড় আড়ত পুরান ঢাকার বাদামতলী থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর শাহ আলী- সবখানে একই চিত্র। এমনকি নামিদামি অভিজাত সুপার শপের ফলেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ফরমালিন। গুলশান, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকার দোকানে সাজানো ফলে পাওয়া গেছে ফরমালিন ও কার্বাইড। তা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে রাস্তায়। এভাবে মাঝে মাঝে নষ্ট করা হয় টনকে টন ফল। কিন্তু অভিযানে ধারাবাহিকতা না থাকায় এবং এ বিষয়ক আইন দুর্বল হওয়ায় বিষমেশানো ফল বিক্রেতা চক্র বহাল বতিয়তে এ কুকর্ম করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা লোকবলের অভাবের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান।
মালিবাগে ফল কিনতে আসা গৃহিণী তানিয়া আক্তার বলেন, ফলে ফরমালিন থাকবে এ আর নতুন কি? জেনে শুনেই বাৎসরিক এ মৌসুমি ফলের নামে বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো ফল পাওয়ার নির্ভরতা কোথায়? তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আইন বা উদ্যোগ ফরমালিন বন্ধ করতে পারছে না। সাজানো গোছানো মৌসুমি ফলের নামে বিষ বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে এ ফল কিনছি, তাও আবার চড়া দামে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেন কিছুই করার নেই। আর আইন হলেও তাতো আর দেশে বাস্তবায়ন হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত এক বুলেটিনে ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে শুধু ফল নয় কাচা শাকসবজিতে ফরমালিন মেশানোর কথা বলা হয়েছে। এক কথায় এখন রাসায়নিকদ্রব্য মিশ্রিত ছাড়া কোনো ফল বা তরিতরকারি বাজারে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুচরা বাজার তদারক করে ফলে ফরমালিন মেশানো রোধ সম্ভব হবে না। বরং আমদানিকারকরা ফল দেশে আনার পর যে জায়গা থেকে সরবরাহ করে সেখানেই জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বাজারে আম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি, কমলালেবুতে ফরমালিন মেশানো হয়। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা আসছে। কিন্তু ফলের গুণ নষ্ট হচ্ছে এবং প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে দেহে। দেখা গেছে, দেশের বাইরে থেকে আসা বেশির ভাগ ফল ঘরে রাখলে সহজে নষ্ট হয় না বা পচে না, অনেক দিন একই রকম থাকে। ঘরে থাকলে দেশি ফল যেখানে দুই থেকে চার দিনের মধ্যে নষ্ট হয় সেখানে মাস চলে গেলেও আমদানি করা ফল নষ্ট হচ্ছে না! এর কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা যায় আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু ইত্যাদি আমদানি করা ফলে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। কার্বাইডে পাকানো ফলে আসল স্বাদ যেমন পাওয়া যায় না তেমন উপকারের বদলে উল্টো দেখা দেয় রোগব্যাধি।
জানা যায়, ফরমালিন আর্সেনিকের চেয়েও ক্ষতিকারক। এতে লিভারের সমস্যাসহ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফরমালিন হচ্ছে এক ধরনের জৈব এসিড। এই এসিড মানবদেহে বড় ধরনের ক্ষতি করে। বাদামতলীর বিসমিল্লাহ ফলের আড়তের মালিক সোহরাব জানান, দেশে বেশির ভাগ ফল আসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল, পাকিস্তান, ভারত ও মিসর থেকে। এসব দেশ থেকে কন্টেইনারে করে সাগর ও নদীপথে তা আনা হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। সেখান থেকে ঢাকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেয়া হয়। দেশের বাইরে থেকে আসা ফল সাধারণ মানুষের কাছে যেতে দেড় থেকে দুই মাস সময় দরকার হয়। আর আমেরিকা থেকে ফল আনতে সবচেয় বেশি সময় লাগে। সেখানে জাহাজে বোঝাই করার পর দেশে আসতে সময় লাগে ৪৫ দিন। কন্টেইনারে আনার কারণে তখন এগুলোতে কিছু দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কন্টেইনারে সাজানোর পর তা ঠা-া রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কন্টেইনারে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। তাই ফরমালিন দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কন্টেইনার থেকে বের করে খোলা অবস্থায় রাখলে এসব ফল ২ থেকে ৩ দিনের বেশি থাকে না। যে কারণে অনেক সময় ফরমালিন মিশ্রিত পানির মধ্যে চুবিয়ে কার্টুনে ভরে তা বাজারজাত করতে হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০১১ এ ভেজাল পণ্যের এক তথ্য প্রকাশিত হয়। এতে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে পাঠানো নমুনা পণ্য পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভোগপণ্যের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ৪৮ ভাগই ভেজাল। ২০১০ সালে ভেজাল নমুনার শতকরা হার ছিল ৫২ ভাগ। এ সময় ল্যাবরেটরিতে মোট ৫৩ হাজার ৪২টি খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ হাজার ১৫৭টিই ছিল ভেজাল।
নগরীতে বিক্রি হওয়া আমের শতকরা ৯৪ ভাগই ফরমালিনযুক্ত। শুধু আম কেন? জাম ও লিচুতেও ফরমালিনের উপস্থিতি শতভাগ। এছাড়া মালটা, আপেল, আঙুর, কমলা, টমেটো, তরল দুধ ও মাছেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। একটি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও’ আন্দোলনের সরেজমিন প্রতিবেদনে ওঠে এসছে এসব ভীতিকর তথ্য।
বিএসটিআই জানিয়েছে, জনবল সঙ্কটের কারণে তাদের অভিযান চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। ২-৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ১০-১২ জনের কাজ করা সহজ নয়। আগামীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ফরমালিনের কারণে লিভারে হেপাটাইটিস ও লিভার পচন বা সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জিক সমস্যা হতে পারে। কার্বাইড মেশানো ফল খেলে বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়েদের বেশি ক্ষতি হয়।
আমাদের সকলকে এ প্রতারনা, অনিয়ম ও খাদ্য দুষন/ খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এতে অবহেলার মানে আমাদের নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজম্মকে ধ্বংস করা।
তা কি নিরাপদ,
তাতে কোনে বিষ বা ফরমালিন নেই ?
বাজারে বাহারি মৌসুমি ফল। নজরকাড়া রং। টকটকে লাল কিংবা গাঢ় হলুদ। মৌ মৌ গন্ধ। চোখ জুড়িয়ে যায়। রমজানে এসব ফলের কদর বেশি। বেশি দাম দিয়েও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে এই ফল গাছ পাকা ফল নয়। এ ফলে মাছি কিংবা মৌমাছি কোনোটাই বসতে দেখা যায় না। চোখে পড়ে না, দেখা মেলে না পিঁপড়ারও। এর কারণ এসব ফলে কার্বাইড ও ফরমালিন মেশানো আছে। কেমিক্যালের নামে বিষ মিশিয়ে এই ফল বিক্রি হচ্ছে সারাদেশের শহর, বন্দর, গ্রাম, গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শুধুমাত্র ফলের পচন এড়াতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহে ক্যান্সারবাহী এই বিষাক্ত কেমিক্যাল। আর বিষ মেশানো এসব ফল খাচেছ দেশের কয়েক কোটি মানুষ। প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সামনেই চলছে এই বিষ মেশানোর কাজ। কিন্তু কারোরই নেই সেদিকে নজর। এছাড়া যারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তারাও এই বিষ খাচ্ছেন। তারপরও নেয়া হচ্ছে না কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের দু’একটা অভিযান দেখা গেলেও তা শুধুমাত্র লোক দেখানো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক এই পদার্থ (বিষ) ব্যবহারে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনির রোগ, লিভার সিরোসিস এবং নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে ভেজাল এই ফলমূল খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুরও জন্ম হতে পারে। এ থেকে প্রতিকার পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। বাজারে ফল-মূল দেখে-শুনে কিনতে হবে।
সরকার গত বছর ফরমালিন আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও ফরমালিন নামের বিষের ভয়াবহতা কমেনি। এর আগেও হাইকোর্ট থেকে এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা থাকলেও কোন কাজ হয়নি। এদিকে গত ১ জুলাই মন্ত্রীপরিষদের সভায় ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ এর খসড়ায় খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজার মেয়াদ বেড়ে দ্বিগুণ হবে, অর্থাৎ ১৪ বছর। যদিও এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
এক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযানে সাড়া জাগানো ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জনসচেতনতা মূলত সৃষ্টি করেছে দেশের গণমাধ্যম। মিডিয়ার কারণেই মানুষ সচেতন হয়েছে। এর পেছনে মিডিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আরো সচেতন হবে। পাশাপশি জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। ভেজালবিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশ, জনগণ ও জাতির স্বার্থে ভেজালবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
র্যাবের মেজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, আইন আছে। অপরাধ করলে আমরা সাজা দেই। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। অপরাধ করার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে এসিডের মতো ‘খাদ্যে রাসয়নিকদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন’ তৈরির বিষয়ে কথা হয়েছে। এটা হলে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কাবাইড, ডিডিটি, হাইড্রোজ, টেক্্রটাইল রং এর উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়, বিক্রয় ও মজুদ করলেই ব্যবস্থা। এ আইন হওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাজারে যাতে এসব ফরমালিন সহজলভ্য না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রিভেনটিভ অ্যাকশন নিতে হবে।
ক্যাব সভাপতি কাজী ফারুক বলেন, এ দেশে আদালতের যে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা, তা এড়াতেই ভোক্তারা মামলার ঝামেলায় যেতে চায় না। বর্তমানে মোবাইল কোর্ট আইনের প্রয়োগের কারণে কিছুটা অগ্রগতি ঘটলেও জনসচেতনতা তৈরিতে আরো সময় লাগবে। একই সঙ্গে আমলাতন্ত্রের একটি অংশ ফরমালিন ব্যবহারের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন বলেও উল্লেখ করেন।
সূত্র মতে, ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (বিষ) মেশানো হয়ে থাকে আর আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক রং। পরে জনসাধারণের অজান্তেই তা বাজারজাত করা হচ্ছে। আম পাকার পর পচন রোধকল্পে নিয়মিত ফর্মালিন স্প্রে করে বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।
পল্টন বায়তুল মোকাররমের উল্টো পাশের ব্যবসায়ী কামাল জানান, ফলে ফরমালিন আছে কিনা বলতে পারব না। আমরা আড়ৎ থেকে আনি, তারা ভালো বলতে পারবেন। ব্যবসায়ী রতন জানান, রাজশাহী থেকে আম আসতে ধাপে ধাপে বিক্রি পর্যন্ত সপ্তাহ চলে যায়, তাই টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় মেডিসিন দেয়া হতে পারে। শুধু আম নয়; এই তালিকায় আছে আনারস, কাঁঠালসহ কয়েক ধরনের মৌসুমি ফল। অনেকেই না জেনে পকেটের টাকা খরচ করে প্রিয় মানুষদের নিয়ে যাচ্ছেন এই বিষ!
রোজায় বড় একটি চাপ পড়ে ফলের ওপর। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, কলা, আপেল, মালটা এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কেমিক্যালমুক্ত আম বলে অনেক স্থানে ঘোষণা দিয়ে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ দোকানে বিক্রি হচ্ছে রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল। কেমিক্যাল ব্যবহার করে দ্রুত পাকিয়ে এসব পণ্য বাজারে ছাড়া হচ্ছে।
রমজান উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিনে বিএসটিআই’র ভেজালবিরোধী অভিযানে এর সত্যতা মিলেছে। রাজধানীর যে দোকানে যাওয়া হয়েছে, সেখানেই মিলেছে বিষ মেশানো ফলের সন্ধান। ঢাকার সবচেয়ে বড় আড়ত পুরান ঢাকার বাদামতলী থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর শাহ আলী- সবখানে একই চিত্র। এমনকি নামিদামি অভিজাত সুপার শপের ফলেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ফরমালিন। গুলশান, ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকার দোকানে সাজানো ফলে পাওয়া গেছে ফরমালিন ও কার্বাইড। তা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে রাস্তায়। এভাবে মাঝে মাঝে নষ্ট করা হয় টনকে টন ফল। কিন্তু অভিযানে ধারাবাহিকতা না থাকায় এবং এ বিষয়ক আইন দুর্বল হওয়ায় বিষমেশানো ফল বিক্রেতা চক্র বহাল বতিয়তে এ কুকর্ম করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা লোকবলের অভাবের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান।
মালিবাগে ফল কিনতে আসা গৃহিণী তানিয়া আক্তার বলেন, ফলে ফরমালিন থাকবে এ আর নতুন কি? জেনে শুনেই বাৎসরিক এ মৌসুমি ফলের নামে বিষ কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ভালো ফল পাওয়ার নির্ভরতা কোথায়? তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো আইন বা উদ্যোগ ফরমালিন বন্ধ করতে পারছে না। সাজানো গোছানো মৌসুমি ফলের নামে বিষ বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে এ ফল কিনছি, তাও আবার চড়া দামে। এ ক্ষেত্রে সরকারের যেন কিছুই করার নেই। আর আইন হলেও তাতো আর দেশে বাস্তবায়ন হয় না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত এক বুলেটিনে ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার এ ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে শুধু ফল নয় কাচা শাকসবজিতে ফরমালিন মেশানোর কথা বলা হয়েছে। এক কথায় এখন রাসায়নিকদ্রব্য মিশ্রিত ছাড়া কোনো ফল বা তরিতরকারি বাজারে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুচরা বাজার তদারক করে ফলে ফরমালিন মেশানো রোধ সম্ভব হবে না। বরং আমদানিকারকরা ফল দেশে আনার পর যে জায়গা থেকে সরবরাহ করে সেখানেই জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বাজারে আম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি, কমলালেবুতে ফরমালিন মেশানো হয়। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা আসছে। কিন্তু ফলের গুণ নষ্ট হচ্ছে এবং প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে দেহে। দেখা গেছে, দেশের বাইরে থেকে আসা বেশির ভাগ ফল ঘরে রাখলে সহজে নষ্ট হয় না বা পচে না, অনেক দিন একই রকম থাকে। ঘরে থাকলে দেশি ফল যেখানে দুই থেকে চার দিনের মধ্যে নষ্ট হয় সেখানে মাস চলে গেলেও আমদানি করা ফল নষ্ট হচ্ছে না! এর কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে জানা যায় আঙ্গুর, আপেল, নাশপাতি, কমলালেবু ইত্যাদি আমদানি করা ফলে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। কার্বাইডে পাকানো ফলে আসল স্বাদ যেমন পাওয়া যায় না তেমন উপকারের বদলে উল্টো দেখা দেয় রোগব্যাধি।
জানা যায়, ফরমালিন আর্সেনিকের চেয়েও ক্ষতিকারক। এতে লিভারের সমস্যাসহ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফরমালিন হচ্ছে এক ধরনের জৈব এসিড। এই এসিড মানবদেহে বড় ধরনের ক্ষতি করে। বাদামতলীর বিসমিল্লাহ ফলের আড়তের মালিক সোহরাব জানান, দেশে বেশির ভাগ ফল আসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল, পাকিস্তান, ভারত ও মিসর থেকে। এসব দেশ থেকে কন্টেইনারে করে সাগর ও নদীপথে তা আনা হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। সেখান থেকে ঢাকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেয়া হয়। দেশের বাইরে থেকে আসা ফল সাধারণ মানুষের কাছে যেতে দেড় থেকে দুই মাস সময় দরকার হয়। আর আমেরিকা থেকে ফল আনতে সবচেয় বেশি সময় লাগে। সেখানে জাহাজে বোঝাই করার পর দেশে আসতে সময় লাগে ৪৫ দিন। কন্টেইনারে আনার কারণে তখন এগুলোতে কিছু দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কন্টেইনারে সাজানোর পর তা ঠা-া রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কন্টেইনারে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। তাই ফরমালিন দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কন্টেইনার থেকে বের করে খোলা অবস্থায় রাখলে এসব ফল ২ থেকে ৩ দিনের বেশি থাকে না। যে কারণে অনেক সময় ফরমালিন মিশ্রিত পানির মধ্যে চুবিয়ে কার্টুনে ভরে তা বাজারজাত করতে হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০১১ এ ভেজাল পণ্যের এক তথ্য প্রকাশিত হয়। এতে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে পাঠানো নমুনা পণ্য পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভোগপণ্যের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ শতকরা ৪৮ ভাগই ভেজাল। ২০১০ সালে ভেজাল নমুনার শতকরা হার ছিল ৫২ ভাগ। এ সময় ল্যাবরেটরিতে মোট ৫৩ হাজার ৪২টি খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ হাজার ১৫৭টিই ছিল ভেজাল।
নগরীতে বিক্রি হওয়া আমের শতকরা ৯৪ ভাগই ফরমালিনযুক্ত। শুধু আম কেন? জাম ও লিচুতেও ফরমালিনের উপস্থিতি শতভাগ। এছাড়া মালটা, আপেল, আঙুর, কমলা, টমেটো, তরল দুধ ও মাছেও ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। একটি বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ বাঁচাও’ আন্দোলনের সরেজমিন প্রতিবেদনে ওঠে এসছে এসব ভীতিকর তথ্য।
বিএসটিআই জানিয়েছে, জনবল সঙ্কটের কারণে তাদের অভিযান চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। ২-৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ১০-১২ জনের কাজ করা সহজ নয়। আগামীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ফরমালিনের কারণে লিভারে হেপাটাইটিস ও লিভার পচন বা সিরোসিস হতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জিক সমস্যা হতে পারে। কার্বাইড মেশানো ফল খেলে বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়েদের বেশি ক্ষতি হয়।
আমাদের সকলকে এ প্রতারনা, অনিয়ম ও খাদ্য দুষন/ খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর এতে অবহেলার মানে আমাদের নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজম্মকে ধ্বংস করা।
হাসান সোহেল : দৈনিক ইনকিলাব
0 comments:
Post a Comment