হুমকিতে জনস্বাস্থ্য - ইট,কাঠ ও কেমিকেল রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে মসলা
খাবারের স্বাদ বাড়াতে যে মসলা ব্যবহৃত হয়, তা-ই এখন স্বাদবর্ধকের পরিবর্তে জনস্বাস্থ্যের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিক মুনাফার জন্য একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ের বিষাক্ত রং, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল, সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য।
রাজধানীতে বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে তাও নেই। ফলে সেখানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মসলা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএসটিআইয়ের লোক-দেখানো অভিযানে সামান্য জরিমানা করা হলেও কিছুদিন পর ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টে আবারও শুরু করেন ভেজাল মসলা উৎপাদন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ভেজাল মসলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্দক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ ভেজাল মসলায় মেশানো ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, গুঁড়ামরিচের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ইটের গুঁড়া। হলুদে দেওয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় স'মিলের কাঠের গুঁড়া ও পোস্তদানায় সুজি। মসলার রং আকর্ষণীয় করতে বিশেষ ধরনের মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। আর এ কারণে গুঁড়ামরিচের ঝাল বাড়ে আর গুঁড়া হলুদের রং আরও গাঢ় হয়। মসলার ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয় ধানের ভুসি। অভিযান পরিচালনাকারীরা জানান, তারা মসলা উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে অভিযানের সময় ধানের তুষের বস্তা পান। এ ব্যাপারে বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, মূলত রাজধানীর বিভিন্ন মিলমালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কৌশলে মসলায় বিষাক্ত খাদ্যদ্রব্য মেশানো হচ্ছে। সাধারণত এ অসাধু চক্র প্রথমে গোপন কারখানায় ভেজাল মসলা উৎপাদন করে। পরে তা প্যাকেটজাত করে খোলাবাজারে সরবরাহ করে থাকে। সাধারণত উৎপাদনকারীরা ভেজাল মসলা সরবরাহ করে থাকেন তিনভাবে। তারা কিছু প্যাকেট ছাড়া, কিছু সাধারণ প্যাকেটে এবং কিছু নামিদামি কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করেন। কিছু ক্ষেত্রে ভেজালকারীরা বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত নকল স্টিকার লাগিয়ে তা বাজারজাত করে থাকেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় এক হাজারের বেশি গুঁড়া মসলার মিল রয়েছে। আর এসব মিলের অধিকাংশেই মেশানো হচ্ছে ভেজাল দ্রব্য। রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার, টঙ্গী ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজার এবং মসলা ভাঙানোর কারখানায় এসব ভেজাল মেশানো হচ্ছে। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভেজাল মসলা মেশানোর হার বেশি। শুধু ছোট কোম্পানি নয়, ভেজাল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে স্বনামধন্য বড় মসলার কোম্পানিগুলো। এ ধরনের বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুধু লোভনীয় প্যাকেট আর বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা ক্রেতাদের ঠকিয়ে কয়েক গুণ বেশি দাম আদায় করছে। রাঁধুনি, প্রাণসহ নামি ব্র্যান্ডেও মিলছে ভেজাল। সম্প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা প্রাণের গুঁড়া হলুদ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষায় এশিয়া থেকে আমদানিকৃত মসলায় ব্যাকটেরিয়া ও মৃত পোকামাকড়ের দেহাবশেষ পেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা বলেন, মসলায় ব্যবহৃত কাপড়ের রং শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কারণে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে মানবদেহে হেপাটাইটিস, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভেজাল মসলা নিয়ন্ত্রণের বা নজরদারির দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি, অনুমোদনহীন যেসব প্রতিষ্ঠান ভেজাল মসলা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ নেওয়া হচ্ছে অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে বিএসটিআইর পরিচালক কমলপ্রসাদ দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'অভিযানের সময় মসলাসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। ঢাকা ও বাইরের জেলাগুলোতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে আমরা সপ্তাহে পাঁচ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি।
সূত্র - বাংলাদেশ প্রতিদিন।
0 comments:
Post a Comment