মধুর উপকারিতা
ড. কে এম
খালেকুজ্জামান :- মধু হলো
মানুষের জন্য
আল্লাহ প্রদত্ত
এক অপূর্ব
নেয়ামত।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ
নিরাময়ে মধুর
গুণ অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ
(সা.) একে
‘খাইরুদ্দাওয়া’ বা মহৌষধ বলেছেন।
আয়ূর্বেদ এবং
ইউনানী চিকিৎসা
শাস্ত্রেও মধুকে বলা হয় মহৌষধ। এটা
যেমন বলকারক,
সুস্বাদু ও
উত্তম উপাদেয়
খাদ্যনির্যাস, তেমনি নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্রও।
আর তাই
তো খাদ্য
ও ওষুধÑ
এ উভয়বিধ
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নির্যাসকে প্রাচীনকাল থেকেই
পারিবারিকভাবে ‘পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক’ পানীয়
হিসেবে সকল
দেশের সকল
পর্যায়ের মানুষ
অত্যন্ত আগ্রহ
সহকারে ব্যবহার
করে আসছে। মধুতে
যে সকল
উপকরণ রয়েছে
এর মধ্যে
প্রধান উপকরণ
সুগার।
সুগার বা
চিনি আমরা
অনেকই এড়িয়ে
চলি।
কিন্তু মধুতে
গ্লুকোজ ও
ফ্রুক্টোজ এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড
হয়ে যায়
এবং ফ্যাট
হিসাবে জমা
হয় না।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর
নমুনা পরীক্ষায়
দেখা গেছে
যে, এতে
এলুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড,
টিন, জিংক
ও জৈব
এসিড (যেমনÑ
ম্যালিক এসিড,
সাইট্রিক এসিড,
টারটারিক এসিড
এবং অক্সালিক
এসিড), কতিপয়
ভিটামিন, প্রোটিন,
হরমোনস, এসিটাইল
কোলিন, এন্টিবায়োটিকস,
ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স এবং পানি (১৯-২১%) ছাড়াও
অন্যান্য পুষ্টিকর
উপাদান রয়েছে। ভিটামিন
যেমনÑ ভিটামিন
সি বা
অ্যাসকারবিক এসিড, ভিটামিন বি-১,
বি-২,
বি-৩,
বি-৫,
বি-৬,
ভিটামিন-ই,
ভিটামিন-কে,
ভিটামিন-এ
বা ক্যারোটিন
ইত্যাদি বিদ্যমান। মধু
এমন ধরনের
ঔষধ, যার
পচন নিবারক
(এন্টিসেপটিক), কোলেস্টেরল বিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়া
বিরোধী ধর্ম
আছে।
মধু দ্বারা
ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ার জীবাণু চতুর্থ
দিনে, টাইফয়েডের
জীবাণু পঞ্চম
দিনে এবং
আমাশয়ের জীবাণু
১০ ঘণ্টায়
ধ্বংস হয়।
নিয়মিত ও পরিমিত
মধু সেবন
করলে নিুলিখিত
উপকার পাওয়া
যায়
১. হƒদরোগ
প্রতিরোধ করে। রক্তনালী
প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা
করে এবং
হƒদপেশীর
কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
২. রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি
পায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ
করে।
৪. দাঁতকে পরিষ্কার
ও শক্তিশালী
করে।
৫. দৃষ্টিশক্তি ও
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
৬. মধুর রয়েছে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা
দেহকে নানা
ঘাত-প্রতিঘাতের
হাত থেকে
রক্ষা করে
বার্ধক্য ঠেকাতে
সাহায্য করে।
৭. মধুর ক্যালরি
রক্তের হিমোগ্লাবিনের
পরিমাণ বাড়ায়,
ফলে রক্তবর্ধক
হয়।
৮. আন্ত্রিক রোগে
উপকারী।
মধুকে এককভাবে
ব্যবহার করলে
পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া
যায়।
৯. দুর্বল শিশুদের
মুখের ভেতর
পচনশীল ঘা-এর জন্য
খুবই উপকারী।
১০. শরীরের বিভিন্ন
ধরনের নিঃসরণ
নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা
বৃদ্ধি করে।
১১. ভিটামিন-বি
কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মধু
øায়ু এবং
মস্তিস্কের কলা সুদৃঢ় করে।
১২. মধুতে স্টার্চ
ডাইজেস্টি এনজাইমস এবং মিনারেলস থাকায়
চুল ও
ত্বক ঠিক
রাখতে অনন্য
ভূমিকা পালন
করে।
১৩. মধু কোষ্ঠকাঠিন্য
দূর করে।
১৪. যারা রক্ত
স্বল্পতায় বেশি ভোগে বিশেষ করে
মহিলারা, তাদের
জন্য নিয়মিত
মধু সেবন
অত্যন্ত ফলদায়ক।
১৫. শিশুদের প্রতিদিন
অল্প পরিমাণ
মধু খাওয়ার
অভ্যাস করলে
তার ঠাণ্ডা,
সর্দি-কাশি,
জ্বর ইত্যাদি
সহজে হয়
না।
১৬. ক্ষুধা, হজমশক্তি
ও রুচি
বৃদ্ধি করে।
১৭. রক্ত পরিশোধন
করে।
১৮. শরীর ও
ফুসফুসকে শক্তিশালী
করে।
১৯. জিহ্বার জড়তা
দূর করে।
২০. মধু মুখের
দুর্গন্ধ দূর
করে।
২১. বাতের ব্যথা
উপশম করে।
২২. মাথা ব্যথা
দূর করে।
২৩. শিশুদের দৈহিক
গড়ন ও
ওজন বৃদ্ধি
করে।
২৪. কাশি-হাঁপানি
এবং ঠাণ্ডাজনিত
রোগে বিশেষ
উপকার করে।
২৫. শারীরিক দুর্বলতা
দূর করে
এবং শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘস্থায়ী
করে।
২৬. মধু খাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে
শরীরের তাপমাত্রা
বৃদ্ধি পায়,
ফলে শরীর
হয়ে ওঠে
সুস্থ, সতেজ
এবং কর্মক্ষম।
২৭. যৌন অক্ষমতা
দূর করে
এবং অটুট
যৌবন ধরে
রাখে।
যৌন অক্ষমতা
দূর করার
জন্য বিশ্বের
প্রখ্যাত মধু
বিজ্ঞানীদের মতে দৈনিক পর্যাপ্ত মধুই
যথেষ্ট।
২৮. নিয়মিত মধু
সেবন করলে
ধাতু দুর্বল
(ধ্বজভঙ্গ) রোগ হয় না।
ড. কে এম
খালেকুজ্জামান :- লেখক : ঊর্ধ্বতন
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ,
আঞ্চলিক কৃষি
গবেষণা কেন্দ্র,
ঈশ্বরদী, পাবনা।[সংগৃহীত - http://www.amadershomoy2.com/content/2012/12/14/news0248.htm]