ক্যারিয়ার গড়তে দ্বারস্থ অনলাইনের
সময়ের সাথে সাথে সবকিছু ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রও তার বাইরে নয়। এখন ক্যারিয়ারের জন্যও ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হতে হয় সবাইকে। চাকরি খোঁজা থেকে শুরু করে পদোন্নতি, নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, নিজেকে প্রকাশ করার সব কাজই এখন অনলাইনের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা যায়। কাজেই অনলাইনের সহযোগিতা এখন আপনার ক্যারিয়ারের উন্নতিতে অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কাজেই ইন্টারনেটকে দূরে ঠেলে দিবেন না। বরং সঠিকভাবে কাজে লাগান একে। সেটাই আপনার ক্যারিয়ারের জন্য হতে পারে প্লাস পয়েন্ট।সময়ের সাথে সাথে সচেতন হয়ে উঠেছে সবাই। এখন ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা-চিন্তাটা শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে একটা সময় পর্যন্ত পরিস্থিতিটা ছিল এমন যে আপনি ভালো বা মোটামুটি ভালো কোনো বিষয় নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিটা বাগিয়ে নিতে পারলেই চাকরির সুযোগ ছিল উন্মুক্ত। অনার্স-মাস্টার্স করা কেউ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে না, এমন চিত্র আজ থেকে বছর বিশেক আগেও তেমন একটা দেখা যেত না। তবে আমাদের দেশ সময়ের সাথে সাথে জনসংখ্যার ভারে ন্যুজ্ব যেমন হয়েছে, তেমনি কমতে শুরু করেছে চাকরির সুযোগ। এখন অনার্স-মাস্টার্স করে চাকরি পাচ্ছে না খুঁজে, এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি।
এ কারণে একদিকে যেমন পড়ালেখা করা অবস্থাতেই চাকরি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে, তেমনি ক্যারিয়ারের ক্ষেত্র কিংবা ক্যারিয়ার গড়ে তোলার ধাপগুলোতেও এসেছে পরিবর্তন। একটা সময় পর্যন্ত চাকরির জন্য ওই দৈনিক সংবাদপত্রের বিজ্ঞপ্তিই ছিল ভরসা। এখন কি আর সেই সময় আছে? এখন তো সবার আগে চাকরির খোঁজে মানুষ ঢুঁ মারে অনলাইন জব পোর্টালগুলোতে। শুধু তাই নয়, সোস্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের রমরমা এই সময়ে আপনি যত বেশি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত, আপনার ক্যারিয়ারটি কিন্তু ততই সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্টারনেট কী করে ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সামনের দিকে, তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো এই লেখায়।
জব পোর্টালেই ভরসা
জব পোর্টালগুলোর মাধ্যমে চাকরির সন্ধান নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সময়ের সাথে সাথে এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখনও সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে নিয়োগের জন্য, তবে বহুজাতিক থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও কিন্তু ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছে অনলাইন বিজ্ঞাপনের দিকে। এখন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করার জন্য আর হাতে-কলমে লেখা বা প্রিন্ট করা জীবনবৃত্তান্ত কিংবা আবেদন পত্রের প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই এখন অনলাইন আবেদন সমর্থন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অনলাইন আবেদন সিস্টেম না থাকলেও জব পোর্টালগুলোর অনলাইন আবেদন সিস্টেম দিয়েই কাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কাজেই ইন্টারনেটের সাথে পরিচিত হয়ে উঠুন শুরু থেকেই।
দক্ষতার প্রমাণ অনলাইনেই
চাকরির সন্ধান না হয় মিলল অনলাইনে। কিন্তু আপনার কাজের নিজস্ব দক্ষতাটি কীভাবে দেখাবেন অনলাইনে, সে প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে। এখন সময়টা এমন যে সকলেই ফেসবুক, টুইটারসহ নানা ধরনের সোস্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। লিংকএডইন-এর মতো প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতেও রয়েছে সকলের সরব উপস্থিতি। এখনকার সময়ে প্রায় সব আধুনিক প্রতিষ্ঠানই আবার সামাজিক যোগাযোগের এসব সাইটে নিজেদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে অ্যাকাউন্ট কিংবা ফ্যানপেজ খোলার মাধ্যমে। এসব সোস্যাল নেটওয়ার্কে তাই আপনার বন্ধুদের তালিকায় যারা রয়েছে, তারাই হয়ে উঠতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের নির্ভরশীল গাইড। হয়ত আপনার ফেসবুকের বন্ধুদের তালিকায় রয়েছেন একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা। ফেসবুকে আপনার কোনো কর্মকাণ্ড তার ভালো লেগেই যেতে পারে। আর সেই কাজের উপযোগী কোনো পদ তার প্রতিষ্ঠানে খালি থাকলে আপনার শরণাপন্ন হয়ে পড়তে পারে সে। হয়ত আপনি খুব ভালো কার্টুন আঁঁকতে পারেন। আপনার ফেসবুক বা টুইটারে আপনার আঁকাঁ কার্টুনের একটি অ্যালবাম রয়েছে। দেখা গেল আপনার অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত কেউ সেই কার্টুন দেখে মুগ্ধ। তিনি হয়ত তার প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য একজন কার্টুনিস্ট খুঁজছেন। কিংবা তারই কোনো বন্ধু তার কাছে পরিচিত কোনো কার্টুনিস্টের রেফারেন্স চেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কিন্তু আপনার ওই কার্টুনের অ্যালবামটি হয়ে যেতে পারে আপনার সহায়।
গুরুত্ব দিন সবাইকে
অনলাইনে তাহলে আপনার আচরণ কেমন হবে? কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু সকলেই আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপরেও যথাসম্ভব আপনার বন্ধুর সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। একটা বিষয় এড়িয়ে চলবেন, কখনই আপনাকে অনলাইনে অন্য সবার চাইতে বড় ভাববেন না। বাস্তব জীবনের জন্যও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য অবশ্য। অনলাইনে যেসব বন্ধু রয়েছে, তাদের মতামতের গুরুত্ব দিন। অন্তত একবার মন দিয়ে শুনুন তাদের কথা। বার্ডস আই অবজারভেশনের কোনো বিকল্প নেই।
অনুসরণ করুণ সফলদের
অনলাইনে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি মাধ্যম হতে পারে সফলদের সাথে যোগাযোগ। সফল যারা রয়েছে, তাদের যুক্ত করুন নিজের নেটওয়ার্কে। দেখুন তারা কী করে কাজ করেন, কী করে কথা বলে, কী করে মানুষকে প্রভাবিত করে। কেউ সাফল্যের দিকে এগিয়ে গেলে তাকে ঈর্ষা না করে দেখুন কী করে সে সাফল্যের পথে এগিয়ে গেল। অনলাইনে সকলের কথপোকথন থেকে আপনি কিন্তু আপনার যোগাযোগের দক্ষতা, ভাষার দক্ষতাও বাড়িয়ে তুলতে পারবেন। অনলাইনই তাই আপনার শিক্ষক এ ক্ষেত্রে।
প্রকাশ করুন
নিজেকে পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশ করুন অনলাইনে। সোস্যাল মিডিয়াতে আপনার পূর্ণরূপটা প্রকাশ করতে পারলে এর চেয়ে বড় রিসিউম আর কী হবে?
সৌজন্য : তরিকুর রহমান সজীব, ইত্তেফাক,
0 comments:
Post a Comment