Translate

Tuesday, June 18, 2013

মা - তুমি কি শুধুই মা - গর্ভভাড়া


সারগোসি বা মা ‘ধার’ বা গর্ভ ভাড়া


“  মা” সৃষ্টিকর্তা  সেরা নেয়ামত। অথচ বিভিন্ন সমস্যার কারনে সন্তান দানে অক্ষম। বা অনেকে শখে বা ভিন্ন কারনে গর্ভ ভাড়ার মাধ্যমে কাঙ্খিত সন্তান বা রেডিমেড সন্তান পাচ্ছেন। এ বিতর্ক  দুনিয়াজোড়া, আবার ‘অন্য’ মায়েদের করুণ কাহিনী -সারোগেসি। এ নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। 
মজার কাহিনী - শাহরুখ খানের বাড়িতে আসছে নতুন অতিথি। এই জুলাই মাসেই ফের মা হবেন গৌরী খান। তবে খবরের শিরোনামে জায়গা করেছে অন্য একটি তথ্য। সন্তান পেতে খান দম্পতি সাহায্য নিয়েছেন সারোগেট মাদারের। ২০১১ সালে আমির খান এবং কিরণ রাও তাদের নবজাতককে পৃথিবীতে এনেছেন এক সারোগেট মায়ের সাহায্যেই। আর সেই কথা গর্বের সঙ্গে গোটা বিশ্বকে জানিয়েও ছিলেন এই দম্পতি। তবে শুধু বলিউড নয়। হলিউডের অনেক তারকাও সারোগেসির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। যেমন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, রবার্ট ডি-নিরো, পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন। এমনকী হলিউডের এক বিখ্যাত সমকামী দম্পতিও সন্তানলাভের জন্য দ্বারস্থ হয়েছে সারোগেট মায়ের কাছে। স্যার এল্টন জন এবং তার সঙ্গী ডেভিড ফার্নিশও।
তাহলে কি সেলিব্রেটি লাইফস্টাইলে সারোগেসি এক নতুন নাম? বিত্তবানদের সন্তানলাভে সারোগেসি পছন্দের তালিকায়? উত্তর যাই হোক না কেন, সত্যিটা এখনও পর্দার আড়ালে। সেই আড়ালে ধরা পড়ে এক অন্য ছবি। এই ছবি কথা বলে মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত যারা আর্থ-সামাজিক কারণে কিছু অসহায় নারীর। নতুন জীবন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ এক অভিনব আদানপ্রদান। 
সারোগেট মাদার। একজন নারী যিনি মাতৃকল্প। যিনি অন্য এক নারীর মাতৃসুলভের জন্য গর্ভধারণ করেন নিজের জঠরে। যার আশ্রয়ে নয়-মাস ধরে তিলে তিলে বেড়ে ওঠা একটি ভ্রূণ। প্রজননে অক্ষম কোনো দম্পতিকে নতুন প্রাণ উপহার দেওয়াই কাজ এই সারোগেট মায়ের। ভাবতে কিছুটা অবাক লাগলেও ভারতবর্ষে সারোগেসি এক রমরমা ব্যাপার। ভারত এখন বিশ্বের সারোগেট ডেস্টিনেশন। বিদেশের বহু দম্পতি যারা সন্তানসুখ থেকে বঞ্চিত তারা পাড়ি দিচ্ছেন এখানে। এখানে টাকার বিনিময় সহজেই মিলছে সারোগেট মাদার। কেন? সেই তর্কে যাওয়ার আগে একবার জেনে নেয়া যাক সারোগেসির সাত-সাতেরো।
কেন সারোগেসি?
হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও যখন হার মানে না বন্ধ্যাত্ব তখন সারোগেসি হয় সন্তানলাভের একমাত্র উপায়। এর কারণ হতে পারে অনেক। ১) অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার মিসক্যারেজ হওয়া, ২) আইভিএফ চিকিৎসায় গর্ভধারণ না হওয়া, ৩) অকাল মেনোপজ, ৪) জরায়ুতে অস্বাভাবিকতা বা অস্ত্রোপচারের কারণে বাদ যাওয়া। অনেক সময় যেই সব দম্পতির বয়স চলি¬শের উর্ধ্বে তারাও সারোগেসি দ্বারস্থ হন।
সারোগেসি কয় প্রকার
১) পার্শিয়াল সারোগেসি-বহু যুগ ধরে এর চল। সন্তানধারণে এখানে কোনও ভূমিকাই পালন করেন না মা। বাবার শুক্রাণু আর সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু থেকে শিশুর জন্ম হয়। ২) ট্রু-সারোগেসি/জেস্টেশনাল/আইভিএফ সারোগেসি-মায়ের ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সারোগেটি মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় ভ্রূণটি। এটাই এখন প্রচলিত পদ্ধতি।
সেই সব মায়েরা
ভারতের আনন্দের গ্রামে সারোগেসি এখন এক নতুন জীবিকা। গুজরাটের এই অঞ্চলে মায়েরা নিজের গর্ভ দিয়ে পরিবারে অর্থ যোগান। সুদূর ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো এক দম্পতির ভ্রূণ বেড়ে ওঠে তাদের জঠরে। ‘ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা, বাড়ি বা জমি-জায়গা কেনার জন্য মহিলারা সারোগেট মা হতে আসেন’, জানালেন আকাক্সক্ষা ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের কর্ণধার ডা. নয়না পাটেল। গুজরাটের এই ক্লিনিকটি দেশের সব থেকে ব্যস্ততম সারোগেট সেন্টার। বছরে প্রায় ১০০ জনের মতন সারোগেট শিশু জন্মায় আকাক্সক্ষার ক্লিনিকে। বিগত দশ বছরে ২৯টি দেশের প্রায় ৬০০ জন আইভিএফ সারোগেট শিশু জন্মেছে আকাক্সক্ষায়। ক্লিনিকে প্রতিদিন ভিড় জমান গুজরাটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মহিলারা। মোটা অঙ্কের টাকার বদলে নিজের জঠরকে ভাড়া দিতে কোনো দ্বিধা নেই তাদের। অচেনা কোনও দম্পতির ভ্রূণকে তারা অবলীলায় জায়গা দেন নিজের শরীরে। দশমাসের এই ত্যাগস্বীকার আমাদের অবাক করলেও ওদের দেয় সারাজীবনের সুখ। সারোগেট মায়েরা এই অর্থ দিয়েই নিশ্চিত করেন ভবিষ্যতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। টাকার বিনিময়ে গর্ভ ভাড়া দেওয়াতে মোটেই সায় নেই বিশ্বের বহু দেশের। ইউরোপ এবং ব্রিটেনে কমার্শিয়াল সারোগেসি তাই মোটেই চলে না, বললেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর। আর আমেরিকাতে এর চল থাকলেও তা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। অতঃপর ভারত এবং ব্যাংককে এখন সবার কাছে পছন্দের গন্তব্য। 
সারোগেট মা হতে ইচ্ছুক মহিলাদের প্রথমেই পূর্ণাঙ্গ শারীরিক এবং মানসিক চেক-আপ করানো হয়। পারিবারিক অবস্থারও বিচার করা হয়। সারোগেটদের একটি লিস্ট থেকে দম্পতিরা বেছে নেন কোন মহিলার জরায়ুতে তাদের ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হবে। একবার ভ্রূণ স্থাপনের পর গর্ভধারণ হলে সম্পূর্ণ আদর যতেœ রাখা হয় সারোগেটদের।
বিদেশে সারোগেসি করতে লাগে চলি¬শ লক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা। ভারতে এই পদ্ধতি হয় মাত্র চৌদ্দ থেকে ২৫ লক্ষ টাকায়। তাই সারা বিশ্বের অনেক দম্পতি মা-বাবা হতে আসছেন এই দেশে। ডা. পাটেলের কথায় একজন মা সারোগেট হলে তার পারিশ্রমিক হয় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। সারাজীবনের হাড়ভাঙা খাটুনি খাটলেও এই মূল্য সঞ্চয় করতে পারবেন না তারা। 
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। অনেকেই বলছেন সারোগেসি হলো গর্ভ শোষণের এক নিদারুন দৃষ্টান্ত। ২০০২ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে সারোগেসিকে নৈতিক আখ্যা দেয়ার পর চারিদিকে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক। সেখানে সারোগেসি কতটা আইনসম্মত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। বিশেষ করে এক গোপনীয়তা বজায় থাকে এই সারোগেসি নিয়ে। ডা. গৌতম খাস্তগীরের কথায়, ‘নলজাতক পদ্ধতিতে খরচ হয় তিন থেকে চার লক্ষ টাকা। সেখানে সারোগেসিতে খরচ গিয়ে দাঁড়ায় দশ লক্ষ টাকার বেশি। এর কারণটা অনেকটাই অস্পষ্ট।’ এই টাকার অংক নিয়েই অনেকসময় সারোগেট মা এবং দম্পতির মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। আবার যে টাকার হাতছানি তাদের ঠেলেছে এই কর্মে সেই টাকার বিনিময় চরম অবনতি হয়েছে তাদের শরীরের। অনেক সময় পাওনা টাকা থেকেও তারা বঞ্চিত হন। তাই আরও ভালো আইন এনে সারোগেসিকে সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে মনে করছেন ডা. নয়না পাটেল। তবে আপাতত এই অবাক জীবিকার মধ্যেই আগামীদিনের সুখ সঞ্চয় করতে ব্যস্ত এই মায়েরা। সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব তাং 19 জুন‘13, ওয়েবসাইট।

0 comments:

Post a Comment