ভয়কে করুন জয়, আর্টিকেল রাইটিং এর কাজ আপনারই জন্য
আর্টিকেল রাইটিং কিভাবে গড়ে দিতে পারে আপনার ক্যারিয়ার ? এই আলোচনায় আসার আগে ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, ঘটনাটি আমার দেখা এক আপুর। তিনি এসইও এর ব্যাপারে টুকটাক শুনেছেন। এসইও শেখার খুব আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে এলেন পরামর্শ নিতে, ভাল কথা, মোটামুটি একটা ধারনা দেয়ার পর যখন বললাম, আপু বর্তমানে এসইও তে আপনি তখনি ভাল করতে পারবেন যখন আর্টিকেল রাইটিং টা আপনার আয়ত্তে থাকবে। কথাটা শুনে আপু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ওরে বাপরে আর যত যাই সম্ভব এই আর্টিকেল রাইটিং আমাকে দিয়ে হবে না! আর্টিকেল রাইটিং এর ব্যাপারে এই ভীতিটা আমি অনেকের মাঝে লক্ষ্য করেছি!
বিশ্বাস করুন, বর্তমানে যারা সফল আর্টিকেল রাইটার তাদের মধ্যে অন্তত ৬০% যাত্রার শুরুতে এ কথাটাই বলেছেন। অথচ তারাই এখন আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারের নতুন মাইলফলক রচনা করে চলেছেন, করছেন নিজেদের ব্র্যান্ডিং। আমার এ লেখা সেই সব আপু ও ভাইয়াদের জন্য যারা আর্টিকেল রাইটিং সম্পর্কে ভীতিকর মনোভাব পোষণ করে বসে আছেন। আপনারা আমার সাথে থাকুন, আমি কয়েকটি পর্বে আর্টিকেল রাইটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করছি, আমার এ লেখা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন এবং আর্টিকেল রাইটিং এর ব্যাপারে আপনাদের যে ভয় তা ঝেটিয়ে বিদায় করতে সক্ষম হবেন।
পর্ব-১ এ আমি আর্টিকেল রাইটিং এর সাথে জড়িত এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করেছি যা স্বাভাবিক ভাবেই আপনাদের মনে আসতে পারে। পরবর্তী পর্ব গুলোতে আমি ধাপে ধাপে আর্টিকেল রাইটিং সংক্রান্ত সকল ব্যাপারগুলো আলোচনা করবো।
ট্রাডিশনাল আর্টিকেল রাইটিং এবং এসইও আর্টিকেল রাইটিং এর মাঝে পার্থক্য কি ?
দেখুন আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে, বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াতে আপনি নানা বিষয়ে যে সব আর্টিকেল পড়ে থাকেন এসইও এর ক্ষেত্রে আর্টিকেল রাইটিং ও একই রকম। কিন্তু ব্যাপারটি ঠিক সেরকম নয়। গতানুগতিক আর্টিকেল রাইটিং এর চেয়ে এসইও আর্টিকেল রাইটিং অনেকাংশেই ভিন্ন। বর্তমান বিশ্বে যেভাবে ইন্টারনেট মার্কেটিং এবং ই-কমার্সের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বিশাল এক গ্লোবাল মার্কেটের সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই গ্লোবাল মার্কেটের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব পণ্য, সেবা বা প্রতিষ্ঠানের সফল মার্কেটিং এর জন্য দরকার সৃজনশীল ও দক্ষ ডিজাইনার এবং রাইটারের।
এ ধরনের চাহিদাই ফ্রিলেন্স রাইটিং এর ক্ষেত্রে আর্টিকেল লেখার নতুন একটি ধারার সৃষ্টি করেছে। ট্রাডিশনাল আর্টিকেল লেখার সময় আপনি আপনার আবেগ, অনুভূতি, নিজস্ব ধারনাকে কিছুটা সাহিত্যের আবহে ফুটিয়ে তুলতে পারেন অর্থাৎ এমনভাবে লেখাটি লিখতে হয় যাতে পাঠক পড়ে আনন্দ পায়। কিন্তু এসইও এর ক্ষেত্রে যে আর্টিকেল লেখা হয় তাতে আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে নতুন নতুন ও কার্যকর তথ্যাবলী প্রদানের দিকে, যাতে পাঠক আপনার লেখাটি পড়ে নতুন কিছু জানতে পারে এবং তাদের মাঝে আরও জানার আগ্রহ তৈরী হয়। সেই সাথে পণ্য বা সেবাটি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। আর এ জন্য আপনি মনগড়া কোন লেখা লিখলে চলবে না। আপনাকে আর্টিকেল লেখার বিষয়টি সম্পর্কে ভালমতো জানতে হবে, বুঝতে হবে, অনুসন্ধান করতে হবে। সেই সাথে ইন্টারনেট ও ই-কমার্সের ধারাকে বুঝতে আর্টিকেল রাইটারকে সবসময় এসইও সংক্রান্ত ধারনাগুলোর নিত্যনতুন আপডেটের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মূলত আপনি তখনি একজন ভালোমানের আর্টিকেল রাইটার হয়ে উঠতে পারবেন যখন আপনি আপনার লেখার বিষয়টি নিয়ে পড়াশুনা করবেন। কারন সফল হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প আর কিছুই নেই।
কেন আর্টিকেল রাইটিং এসইও তে এতটা গুরুত্ব বহন করে?
এখন আপনি বলতে পারেন, এসইও এর তো হাজারো কাজ রয়েছে তাহলে আমি বার বার আর্টিকেল রাইটিং কে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ বলছি?
বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে (যেমনঃ google, yahoo, being ইত্যাদি) আপনার ওয়েবসাইট টিকে প্রথম পেজে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আর্টিকেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটু সহজ করে বলি, ধরুন আপনি একটি পণ্য বা সেবার জন্য আর্টিকেল লিখে অনলাইনের কোন একটি মাধ্যমে পোস্ট করলেন। যদি আপনার আর্টিকেলটি ইনফরমেটিভ হয় এবং পাঠককে মোটিভেট করতে সক্ষম হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনার ফ্যান সংখ্যা বাড়বে, যারা আপনার লেখা থেকে আরও নতুন কিছু জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে, আপনার আর্টিকেল টি নেটের বিভিন্ন লিঙ্ক এ শেয়ার করা শুরু করবে। এতে কি হবে, যে যে এই পণ্য বা সেবাটি পেতে আগ্রহী তারা আপনার ওয়েবসাইটে ( ওয়েবসাইট টি হতে পারে আপনার নিজস্ব কিংবা যে ওয়েবসাইট টির জন্য আপনি কাজ করছেন) ভিজিট করবে, কেউ কেউ পণ্য ক্রয় করতে বা সেবাটি পেতে আগ্রহ দেখাবে। ফলে একদিকে সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের পেজ রেঙ্ক বাড়বে অন্যদিকে পণ্য বা সেবার ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে অথবা সংস্থাটির প্রচার বাড়বে।
গুগলের পেঙ্গুইন আপডেটের পর এসইও করার ক্ষেত্রে আর্টিকেল রাইটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই গুণসম্পন্ন আর্টিকেল লেখার বিকল্প আর কিছুই নেই।
অনলাইনে ক্যারিয়ার শুরুর মাধ্যম হিসেবে আর্টিকেল রাইটিং কতটা নির্ভরযোগ্য?
এসইও সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মধ্যে আপনি কেন আর্টিকেল রাইটিং কে বেছে নিবেন? কি, এমনি তো প্রশ্ন জাগছে মনে তাই না? আসলে আমি মনে করি, বর্তমানে আর্টিকেল রাইটিং হলো এসইও এর মেরুদণ্ড। যদি আপনি আর্টিকেল রাইটিং কে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনার কাজের অভাব হবে না। আপনি নিজেই google এ সার্চ দিয়ে দেখুন না আর্টিকেল রাইটিং এর উপর সারা বিশ্বে কতো কাজ অফার করা হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশেই তো রয়েছে এমন অনেক দৃষ্টান্ত যারা আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিআর গড়ে নিয়েছেন। আসলে ব্যাপারটা হলো, এসইও এর সাথে আর্টিকেল রাইটিং এমনভাবে জড়িত যে এসইও সংক্রান্ত অধিকাংশ কাজেই আপনাকে আর্টিকেল রাইটিং করতে হতে পারে। এখন আপনি যদি এর মাধ্যমে আপনার ক্যারিআর শুরু করেন তাহলে আপনার শেকড় তো প্রথমেই পোক্ত হয়ে গেলো।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে আমি প্রথমেই কিছু বিষয়ে সতর্ক করে দেইঃ
o নিজের সাথে ক্লিয়ার হয়ে নিন, কেন আপনি আর্টিকেল রাইটিং করতে চাচ্ছেন? এখানে আপনার স্বার্থ কি? আপনি আসলে আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে কি অর্জন করতে চাইছেন? যদি উত্তর আসে আপনার নিজের ব্রান্ডিং এবং সেই সাথে নিজের ক্যারিআরকে গড়ে নেয়া, তাহলে বুঝবেন আপনি সঠিক পথে আছেন। কারন কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া যাত্রাপথ কিন্তু খুব বেশি দূর বিস্তৃত হতে পারে না।
o ক্যারিআরের শুরুতে যা ইচ্ছা তা নিয়ে লেখা শুরু না করে আপনার আগ্রহ আছে এমন বিষয়ে লেখা শুরু করুন। এতে আপনি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, এসইও সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করুন।
o ব্যাপারটা যেন এমন না হয়, আপনি কোন একটা বিষয়ে লিখলেন, পাঠক আপনার লেখা পড়ে স্বাভাবিকভাবে এটাই ভাববে আপনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ। তারা আপনাকে কোন প্রশ্ন করলো আর আপনি তার সঠিক উত্তর দিতে পারলেন না।
o একটি কথা নিজের মনের মাঝে গেঁথে নিন যে, আপনি লিখছেন ক্যারিয়ার গড়তে, তাই এতে যত কষ্টই হউক না কেনো তার মুখোমুখি হওয়ার মন মানসিকতা রাখতে হবে।
আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সফল হলেন যারা
বর্তমানে যারা আর্টিকেল রাইটিং এর সাথে যুক্ত আছেন এবং আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে নিজেদের ব্রান্ডিং করে ক্যারিয়ারের মাইলফলক রচনা করেছেন এমন কয়েকজন ব্যাক্তির মধ্যে রয়েছেন MD EKRAM, HABIBUR RAHMAN DIPU, NURUL AREFIN, MARJAN AHMED সহ আরও অনেকে।
তাছাড়া Creative IT থেকে কোর্স করে বের হওয়া এমন অনেক নতুন মুখ আর্টিকেল রাইটিং এর জগতে সফলভাবে পা রেখেছেন যাদের লেখাগুলো আপনি http://genesisblogs.com/ এ গিয়ে পড়তে পারেন।
Google হচ্ছে আপনার এমন একজন গুরু যাকে আপনি যাই জিজ্ঞেস করুন না কেন সে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে সব সময় বসে আছে। তাই নিজে একটু কষ্ট করে গুগুলে ঘাটাঘাটি করে আসুন। আমি আপনাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশের Top কিছু Blogsite এর নাম দিয়ে দিচ্ছি। যেখানে গেলে আপনি এসইও নিয়ে, আর্টিকেল রাইটিং নিয়ে হাজারো আর্টিকেল পাবেন। দেখতে পাবেন সেই মুখগুলো যারা এক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে -
www.techtunes.com.bd
www.tunerpage.com
www.pechelplinebd.com
www.BigganProjukti.com
www.techspate.com
www.bdrong.com
www.techmasterblog.com
www.techshohor.com
www.Moumachibd.com
www.techpriyo.com
এ তো গেলো বাংলাদেশের কিছু ব্লগসাইট। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনলাইনে খুবই জনপ্রিয় কিছু ব্লগসাইট হলো -
Blogging
squidoo
Ezine@rticle
Bukisa
Hubpages
Ghost bloggers
Hire writers
Article tellers
এ রকম হাজারো ব্লগসাইট আপনি খুজে পাবেন গুগলে।
সেই সাথে যারা ঘরে পত্রিকা রাখেন, প্রথম আলো, যুগান্তর, কালের কন্ঠ, সমকাল, জনকন্ঠ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কয়েকদিন পর পরই সেই সব মুখগুলো নিয়ে লেখা হয় যারা
Freelancing করে বিভিন্ন সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন।
হোম ওয়ার্ক
এখন সব কিছু বুঝে-শুনে চুপ করে থাকলে কিন্তু হবে না। কাজে নেমে পড়তে হবে। আমি যেহেতু কয়েকদিন পর পর আপনাদের জন্য নতুন পোস্ট দেবো সুতরাং এর ফাঁকে আপনাকে প্র্যাকটিস করতে হবে। কারন বেশি বেশি করে প্র্যাকটিস না করলে কোনদিনই আপনি এসইও এর কাজ শিখতে পারবেন না। আগামী পোস্ট পাওয়ার আগে আপনাদের যা করা উচিত হবে তা হলো :o আর্টিকেল রাইটিং শিখবেন এ নিয়ে ছোট্ট একটা প্ল্যান করে ফেলুন, যাতে আমার আর্টিকেল এর পর্বগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনারও আর্টিকেল লেখা আয়ত্তে চলে আসে ।
o আপনার মনে আর্টিকেল রাইটিং এর ব্যাপারে যতো প্রশ্ন আসে তা গুগলে সার্চ করুন।
o বাংলা-ইংরেজি ব্লগ গুলোতে একটু ঘাটাঘাটি করে আসুন।
আজ এ পর্যন্তই। যদি কিছু জানতে চান কিংবা কোন সমস্যায় পড়েন তাহলে ভিজিট করুন এই গ্রুপ এ । আশা রাখি, আর্টিকেল রাইটিং না শেখা পর্যন্ত আমরা কেউ কাউকেই ছাড়ছি না। ভালো থাকবেন সবাই…।
সূত্র : Sumaiya rahman, Genosis Blog
0 comments:
Post a Comment