তাজা মাছে উচ্চমাত্রায় ফরমালিন ফল-সবজিতে প্রিজারভেটিভ
সুপার শপগুলোয় বিভিন্ন ধরনের প্রচুর মাছ দিনের পর দিন থরে থরে সাজানো থাকে ক্রেতার জন্য। এসব মাছে কখনও পচন ধরে না। দীর্ঘ দিনেও পচন ধরে না ফলমূল আর শাকসবজিতেও। এর কারণ ধরা পড়েছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, নামি সুপার শপগুলো পচনশীল পণ্যে প্রিজারভেটিভ ও ফরমালিন মিশিয়ে সেগুলোকে ‘তাজা’ রাখে। প্রতিদিন যেসব মাছ অবিক্রীত থাকে সেগুলোকে ফরমালিন মেশানো পানিতে চুবিয়ে পরদিন বিক্রির জন্য ফের সংরক্ষণ করা হয়। আর শুধু মাছই নয়, ফরমালিন মেশানো হয় ফল ও শাক-সবজিতেও। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব গুরুতর অপরাধ ধরাও পড়ে। তখন গুনতে হয় মোটা অংকের জরিমানা। তবে প্রথমসারির সুপার শপগুলোতে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হলে নিদেনপক্ষে সেখানে ৬ মাসের মধ্যে আর অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতির ফলোআপ করা হয় না। শত চেষ্টা করেও সেখানে অভিযান চালানো যায় না। যুগান্তর অনুসন্ধানী সেল তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে এ রকম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে।
ভয়ংকর চিত্র : দুই বছর আগে মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে রাজধানীর কয়েকটি বিখ্যাত সুপার শপ থেকে বিভিন্ন মাছের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এতে ভয়ংকর চিত্র বেরিয়ে আসে। পরীক্ষায় দেখা যায়, সাধারণ বাজারের তুলনায় কয়েকটি সুপার শপের মাছে অতি উচ্চমাত্রায় ফরমালিন। মৎস্য অধিদফতরে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার থেকে জানা যায়, গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর চেইন সুপার শপ মীনা বাজারের উত্তরা শাখা থেকে কয়েকটি বড় মাছের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে বড় কাতল মাছে তিন দশমিক ৭৭ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া যায়। এ জন্য ওই শাখার ম্যানেজার মাহমুদুর রহমানকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সঙ্গে মীনা বাজারকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই তারিখে মিরপুরের আমানা সুপার শপ থেকে সংগৃহীত কয়েক ধরনের মাছের মধ্যে কাতল মাছে তিন দশমিক তিন, রুই মাছে চার দশমিক পাঁচ ও বোয়াল মাছে তিন দশমিক পাঁচ পিপিএম মাত্রার ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। গত ৪ আগস্ট আগোরা ও জি-মার্টসহ কয়েকটি সুপার শপে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেয় র্যাব-৪। বেলা দেড়টার দিকে মিরপুর-১ এর জি-মার্ট নামের একটি বহুতল সুপার শপে অভিযান চালায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল। সঙ্গে যোগ দেন বিএসটিআইর ইন্সপেক্টর জিয়াউল হক ও মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজিম উদ্দীন আহাম্মেদ। জি-মার্ট সুপার শপের ফ্রিজে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা কাচকি মাছ পরীক্ষার পর হতবাক হয়ে যান মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজিমউদ্দীন আহাম্মেদ। উন্নত প্রযুক্তির একটি ডিজিটাল ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র কাচকি মাছে ফরমালিন শনাক্ত করে ৭ দশমিক ৪৬ পিপিএম। নাজিমউদ্দীন আহাম্মেদ জানান, এর আগে কোনো মাছে এত উচ্চমাত্রার ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। জি-মার্টে অভিযান চালিয়ে আরও কয়েক ধরনের মাছ পাওয়া যায় যেগুলো পুরোপুরি পচে গিয়েছে। কিন্তু ফ্রিজের মধ্যে রাখায় তাজা দেখাচ্ছিল। এ ছাড়া ফ্রিজে সংরক্ষিত পাবদা ও টেংরা মাছে চার দশমিক ৮৬ পিপিএম ফরমালিন পাওয়া যায়। অভিযানের এ পর্যায়ে জি-মার্টের ম্যানেজার মোহন মিয়াকে আটক করা হয়। মাছে ফরমালিন মেশানো ও মেয়াদোত্তীর্ণ দই বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান জি-মার্টকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মৎস্য অধিদফতরের ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও গণসচেতনা সৃষ্টি প্রকল্পের পরিচালক ড. জিএম শামসুল কবির যুগান্তরকে বলেন, মানবদেহে সর্বোচ্চ দশমিক ৭ মাত্রা পর্যন্ত ফরমালিন সহনীয়। তিনি বলেন, সাধারণত একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এক-তৃতীয়াংশ হারে বরফ মিশিয়ে মাছ ফ্রিজিং করতে হয়। কিন্তু সুপার শপগুলোতে প্রদর্শনের জন্য মাছগুলো বরফের ওপরে রাখা হয়। ফলে মাছে পচন ধরে। দিনের শেষে এসব অবিক্রীত মাছ সংরক্ষণের জন্য উচ্চমাত্রায় ফরমালিন মেশানো হয়। পুরনো ও নষ্ট হয়ে যাওয়া মাছ চেনার উপায় হিসেবে তিনি বলেন, মাছ কাটার পর যদি দেখা যায় কাটার গোড়ায় লাল রঙ ধারণ করেছে তবে বুঝতে হবে মাছটি বেশ পুরনো এবং এটি দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৎস্য অধিফতরের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী সংগঠন আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (আইএআরসি) ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে ফরমালিনকে এক নম্বর তালিকায় রেখেছে। মানবদেহে ফরমালিনের ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জোয়ারদার যুগান্তরকে বলেন, মাছ-মাংসে উচ্চমাত্রায় ফরমালিন মিশিয়ে দীর্ঘদিন রেখে দিলে তা মাছের কোষে চলে যায়। ফলে তা রান্নার সময় দূরীভূত হয় না। ফরমালিন মিশ্রিত বিষাক্ত মাছ-মাংস মানুষের পাকস্থলীতে গিয়ে পৌঁছে। এরপর সেখান থেকে শরীরে নানা রোগের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
‘স্বপ্ন’ ছাড়া আর কেউ নয় : শুধু মাছেই নয়, বিভিন্ন সুপার শপে থরে থরে সাজিয়ে রাখা ফলেও উচ্চমাত্রায় ফরমালিন ও প্রিজারভেটিভ পাওয়া গেছে। কিন্তু সুপার শপের ফলেও ফরমালিন পাওয়া যেতে পারে- ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদেরও এ ধারণা ছিল না। মৎস্য অধিদফতরের ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রচলিত রাসায়নিক কিট ব্যবহার করে অভিযান চালানোর সময় ফলে ফরমালিন ধরা পড়ত না। এ কারণে অনেক সুপার শপকেই ফরমালিনমুক্ত বলে সনদ দিতে হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক একটি মেশিন মৎস্য অধিদফতরের হাতে আসার পর এ অবস্থা বদলে গেছে। এ মেশিনে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সেন্সর আছে যা বাতাসে থাকা ফরমালিনও শনাক্ত করতে পারে এবং মুহূর্তেই রিডিং দেয়। সুপার শপগুলোকে এ ধরনের মেশিন কিনে প্রতিদিন ফরমালিন পরীক্ষার পর তথ্য রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু শুধু সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ ছাড়া আর কেউ মেশিন কেনেনি। সুপার শপের ফলে ফরমালিন ধরা পড়ার প্রথম অভিজ্ঞতার কথা শোনান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত বছর আগস্ট মাসে মোহাম্মদপুরের কেরি ফ্যামিলি সুপার শপে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছিল। এ সময় কমলা ও আঙুর ভর্তি কয়েকটি ঝুড়ি দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছিল শপের কয়েকজন কর্মচারী। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় তাৎক্ষণিক সেগুলো পরীক্ষা করে তাতে উচ্চমাত্রার ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ সুপার শপে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা কমলা ও কয়েক ধরনের শাকসবজিতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে এমন রাসায়নিক মেশানোর প্রমাণ পাওয়া যায়।
জেল-জরিমানা : গত ২৪ জুলাই স্বপ্ন সুপার শপের পশ্চিম কাফরুলের আউটলেটে অভিযান চালান ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান। অভিযানে ফ্রিজে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা মাছে ফরমালিন পাওয়া যায়। এ জন্য স্বপ্নকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। স্বপ্নর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজার থেকে মাছ কিনে তারা নিজস্ব মেশিনে ফরমালিন পরীক্ষা করেন। কিন্তু এ অভিযানের কারণে বোঝা গেল তাদের এ দাবি সত্য নয়। সুপার শপের জাল-জালিয়াতি নিয়ে যুগান্তরের অনুসন্ধান যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা আফসারি এক সাহসী অভিযান চালান। গত ২২ জুলাই তিনি একসঙ্গে তিনটি প্রথম সারির সুপার শপে অভিযান চালান। ২২ জুলাই ভোরে ধানমণ্ডির সীমান্ত স্কোয়ারে অবস্থিত আগোরা সুপার শপে অভিযান চালানো হয়। সেখানে বিএসটিআইর অনুমোদনবিহীন সেজান ব্র্যান্ডের জুস, ফার্মল্যান্ড ব্র্যান্ডের ঘি এবং আমদানিকৃত শ্যাম্পু ও সাবান পাওয়া যায়। অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির অভিযোগে আগোরাকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন আমদানিকৃত অনুমোদনহীন টুথপেস্ট, সাবান ও দই বিক্রির অপরাধে ধানমণ্ডির ৯/এ সড়কে অবস্থিত চেইন সুপার শপ মীনা বাজারকেও আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ধানমণ্ডির নন্দন মেগাশপকে ভেজাল সেমাই ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির অভিযোগে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা আফসারি। এগুলো হচ্ছে চলিত বছরের ৮ মাসে শুধু র্যাবের কয়েকটি অভিযানের খণ্ডিত চিত্র। এর বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত সুপার শপগুলোর বিরুদ্ধে চালানোর বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভিযানের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর ৮ আগস্ট স্বপ্নর শেওড়াপাড়া শাখায় মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল পণ্য ও মাছে ফরমালিন পাওয়া যায়। মাছে ফরমালিন মেশানো ও ভেজাল খাদ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগে এ শাখার তিন কর্মচারীকে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে সাত লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একইদিন মোহাম্মদপুরের কেরি ফ্যামিলি সুপার শপে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখা ও মাছে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর পরের মাসেই ২০ সেপ্টেম্বর স্বপ্নর উত্তরা শাখাকে ভেজাল পণ্য বিক্রির দায়ে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মীনা বাজারের উত্তরা শাখায় মাছে ফরমালিন পাওয়া যায়। এ কারণে মীনা বাজারের উত্তরা শাখার ইনচার্জ মীর সাইদুল ইসলামকে একমাসের জেল দেয়া হয়। গত বছর ১৮ অক্টোবর মীনা বাজারের ধানমণ্ডি শাখায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় বেলে মাছে উচ্চমাত্রায় ফরমালিন পাওয়া যায়। ফরমালিন মিশ্রিত মাছ বিক্রির অভিযোগে মীনা বাজারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১২ কেজি বেলে মাছ ধ্বংস করা হয়।
দাবি কোয়ারেন্টাইন : মাছ, মাংস, ফল ও শাকসবজিতে ফরমালিন ধরা পড়ার পর বিভিন্ন সুপার শপের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা ফরমালিন মেশান না। যেখান থেকে তারা এসব পণ্য সংগ্রহ করেন সেখানেই ফরমালিন মেশানো হয়ে থাকতে পারে। এ জন্য তারা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশে কোয়ারেন্টাইন কার্যকর করা তো দূরের কথা ইংরেজি কোয়ারেন্টাইন শব্দটির সঙ্গেই এখনও অনেকে পরিচিত নন। বিশেষজ্ঞরা জানান, কোয়ারেন্টাইন মানে সঙ্গনিরোধ। কোনো খাদ্যপণ্য বা উপাদানের সঙ্গে আরেকটি উপাদানকে পৃথক পৃথক করে রেখে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে দেখা, যাতে করে ক্ষতিকর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পণ্যের সঙ্গে মিশে ভালো পণ্য ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রান্ত না হয়। জানা গেছে, দেশের প্রায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দরে ২৬টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে আছে প্রশিক্ষিত লোকবল ও বহু মূল্যবান যন্ত্রপাতি। কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটা বাবদ সরকারের খরচও বছরে কয়েক কোটি টাকা। মৎস্য, পশুসম্পদ, ফল-মূল এমনকি পানের মতো খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রেও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যকর করার কথা। নিয়মানুযায়ী যে কোনো প্রাণী, মাছ, ফল আমদানির সময় বন্দরগুলোতে কোয়ারেন্টাইন হওয়ার কথা। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে কোনো আমদানিকারকের ফল বা মাছ-মাংসের চালান আটকে গেছে এমন কথা সাধারণত শোনা যায় না। রাজধানীর খামারবাড়ীতে রয়েছে কোয়ারেন্টাইন বিষয়ক প্রধান সরকারি দফতর। এ দফতরের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ তাফিজ উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, যথাযথ লোকবল ও প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে দেশের বিভিন্ন বন্দরে এখন পুরো মাত্রায় কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যকর নেই। তারপরও স্বল্প সামর্থ্য দিয়েই তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পুরোমাত্রায় কার্যকর থাকলে মাছ-মাংস, ফলমূল ও শাকসবজি বিশুদ্ধভাবেই পাওয়া যাবে। কিন্তু দেশের ভেতর উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ মাছ-মাংস তো সরাসরি ঢুকে পড়ছে বাজারে। এসব মাছ-মাংসের পরীক্ষা আগে হওয়া উচিত।
সিল ঘষে নতুন মেয়াদ : মাছ, মাংস ও ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য ক্ষতিকর উপাদানমুক্ত রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপার শপগুলোতে মান ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ মালামালের ব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুপার শপগুলোকে একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। মান বিভাগকে শক্তিশালী করার জন্য সুপার শপের মালিকদের বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কিন্তু আগোরা, মীনা বাজার, স্বপ্নসহ কয়েকটি প্রথমসারির সুপার শপ কোয়ালিটি কন্ট্রোল বা মান বিভাগ চালু করলেও নষ্ট বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের দৃশ্যমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করেনি। বেশিরভাগ সুপার শপে ভোগ্যপণ্য বা খাদ্যপণ্যের মান যাচাইয়েরও কোনো ব্যবস্থা নেই। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা তার অভিজ্ঞতা থেকে সুপার শপের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের হাঁড়ির খবর শোনান। তিনি বলেন, মিরপুরের আমানা সুপার শপে অভিযান চালাতে গিয়ে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা বেশকিছু মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল পাওয়া যায়। তার সন্দেহ হয় এ সুপার স্টোরে নিয়মিতই মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল বিক্রি করা হয়। এ কারণে তিনি শপের ম্যানেজারকে মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল কোথায় রাখা হয় তা জানতে চান। কিন্তু ম্যানেজার গড়িমসি করতে শুরু করেন। তখন সুপার স্টোরটির গুদামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে পাওয়া যায় কয়েক টন মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য। সুপার শপগুলোর বিপুল পরিমাণ অবিক্রীত মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য কি হয় সে প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যায় গত বছর একটি বড় অভিযান থেকে। চেইন সুপার শপ স্বপ্নর মেয়াদোত্তীর্ণ ৩ ট্রাক পণ্য ধরা পড়ে। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির কয়েকটি ঘরে স্তূপ করে রাখা নানা ধরনের শ্যাম্পু, সাবান, সুগন্ধি, জুস, কোল্ড ড্রিংসসহ নানা ধরনের দেশী-বিদেশী মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য জব্দ করা হয়। ওই বাড়িতে বসে এসব পণ্যের গায়ে মেয়াদ সংক্রান্ত সিল স্পিরিট দিয়ে ঘষে তুলে ফেলে নতুন মেয়াদ লাগানো হচ্ছিল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে স্বপ্ন সুপার শপের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির যুগান্তরকে বলেন, অতীতের উদাহরণ টেনে স্বপ্নকে এখন দোষারোপ করা ঠিক হবে না। অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। দেশে একটি উন্নত বিক্রয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য স্বপ্ন প্রতি মাসে এখনও কোটি টাকা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে সুপার শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ক্রেতারা এখন দোকানে গিয়ে আগে পণ্যের প্যাকেটে চোখ বুলিয়ে দেখেন মেয়াদ ঠিক আছে কিনা। এ অবস্থাটা তৈরি হয়েছে সুপার শপগুলোর জন্যই। সুপার শপের মালিকরা সততার সঙ্গে নিয়ম মেনেই ব্যবসা করতে চান। কিন্তু সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে অনেক মালিক তার সুপার শপ বন্ধ করে দিচ্ছেন।
সুত্র - দৈনিক যুগান্তর।