Translate

Thursday, November 8, 2012

‘ঘরে বসে আয়’ - প্রতারনর হাত থেকে বাচুন


‘ঘরে বসে আয়’-এর নামে প্রতারণার ফাঁদ!

কলাবাগান থানার সামনে গত ১ জুন টাকা ফেরতের দাবিতে স্কাইল্যান্সারের সদস্যরা বিক্ষোভ করেন
কলাবাগান থানার সামনে গত ১ জুন টাকা ফেরতের দাবিতে স্কাইল্যান্সারের সদস্যরা বিক্ষোভ করেন
ছবি: সংগৃহীত
ঘরে বসে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ‘অ্যাফারি ট্র্যাক লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এতে সাড়া দেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা আমিরুল কবির। তাঁর দাবি, নিবন্ধন ফি হিসেবে তিনি সেখানে সাত লাখ টাকা দেন। কিছুদিনের মধ্যেই সব টাকা নিয়ে কার্যালয় বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। 
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের চাকরিজীবী আমিরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটু সচ্ছলতার আশায় জীবনের সঞ্চিত সব টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেছে।’ 

ইতি  পূর্বে এই ব্লগে একটি সতর্কতা মূলক  নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল।

অ্যাফারি ট্র্যাকের মতো ডোলেন্সার, স্কাইল্যান্সার ও বিডিএস ক্লিক নামের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সদস্য হয়ে এখন অনেকই হতাশ। 
য়েকটি যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ থেকে নিয়েছে ‘ট্রেড লাইসেন্স’। ‘সরকারি অনুমোদন’ হিসেবে দেখিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। 
জানতে চাইলে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের নিবন্ধক বিজন কুমার বৈশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে তা নিবন্ধন করতে আমরা আইনগতভাবে বাধ্য। যদি কেউ প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তাহলে তা বাতিল করার এখতিয়ার আমাদের নেই।’ 
ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, লাখ লাখ ট্রেড লাইসেন্সধারীর মধ্যে কে শর্ত অনুযায়ী ব্যবসা করছে, তা তদারক করা কঠিন। 
অ্যাফারি ট্র্যাকের কয়েকজন সদস্য জানান, গত জানুয়ারিতে রাজধানীর পান্থপথে একটি ভবনের কার্যালয়ে ‘অ্যাফারি ট্র্যাক লিমিটেডের’ কার্যক্রম শুরু হয়। বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বহুধাপ বিপণন পদ্ধতিতে (এমএলএম) আউটসোর্সিংয়ের কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানে একটি নিবন্ধনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে মাসে আয় করা যাবে প্রায় দুই হাজার টাকা। একজন একাধিক নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রতি নিবন্ধনের ফি আট হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধন হয়। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেন অনেকেই। কথা ছিল, প্রতি মাসের অর্জিত টাকা কার্যালয় থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু গত জুনে কার্যালয় বন্ধ করে পালিয়ে যান কর্মকর্তারা। 
সম্প্রতি রাজধানীর পান্থপথে অ্যাফারি ট্র্যাকের কার্যালয়ে গিয়েও তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, তিন-চার মাস আগে কার্যালয়টি বন্ধ করে কর্মকর্তারা চলে গেছেন। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে অ্যাফারি ট্র্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশরাক কবীরের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 
ভাঙচুর, বিক্ষোভ, মামলা: ইতিমধ্যে ডোলেন্সার, স্কাইল্যান্সার ও বিডিএস ক্লিক নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন সদস্যরা। সদস্যদের অভিযোগ ও মামলার বিবরণ অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠান তিনটির কর্মকর্তারা প্রায় ৯০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি কলাবাগানে স্কাইল্যান্সারের কার্যালয়ে ভাঙচুরও করেছেন সদস্যরা। পুলিশ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। পরে জামিনে তাঁরা বের হন। 
ডোলেন্সার ও বিডিএস ক্লিকের কার্যালয় ছিল ধানমন্ডিতে। ডোলেন্সারের স্বত্বাধিকারী রোকন ইউ আহমেদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে সদস্যদের অভিযোগ। এ অভিযোগে চলতি বছরের ২৩ জুলাই থেকে বেশ কয়েক দিন মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগে রোকনের শ্বশুরবাড়িও ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন সদস্যরা। সদস্যরা মিরপুর ও ধানমন্ডি থানায় মামলাও করেছেন। একই অভিযোগে বিডিএস ক্লিকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। বিডিএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা পলাতক। 
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ডোলেন্সার ও বিডিএস ক্লিকের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 
কলাবাগান থানার ওসি এনামুল হক বলেন, শিগগিরই ডোলেন্সারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। 
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল মোমিন বলেন, ‘পরিবার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে স্কাইল্যান্সারের সদস্য হয়েছিলাম। এখন পরিবার থেকেও বেশ চাপে আছি।’ 
সৈয়দপুরের বাসিন্দা মোসাম্মৎ নাজনীন জানান, তাঁর আশ্বাসে প্রায় ৮০০ জন ডোলেন্সারের সদস্য হয়েছিলেন। বিনিয়োগ করা টাকা হারিয়ে একদিকে তিনি যেমন সর্বস্বান্ত, অন্যদিকে সদস্যদের হুমকির মুখে দিশেহারা।
প্রতারণার কৌশল: প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরকারি অনুমোদন দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, প্রচারপত্র বা পোস্টারের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের প্রচার চালান। আবার অনেক সময় কর্মকর্তারা নিজেরাই বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে সদস্য হতে উৎসাহিত করেন। তবে সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়, তা বাস্তবে দেখা যায় না। 
অ্যাফারি ট্র্যাকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরনে সফটওয়্যার আমদানি, রপ্তানি ও সরবরাহকারীর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু কর্মকর্তারা তা না করে বরং আউটসোর্সিংয়ের নামে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যায়। 
সতর্কতা: অনলাইন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে অনলাইন আউটসোর্সিং ও এমএলএম নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় অনেকেই সহজে প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারছেন। 
ফ্রিল্যান্সার রাসেল আহমেদ বলেন, আউটসোর্সিং হচ্ছে বাইরের কোনো দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ করে দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা। এ কাজ হতে পারে ওয়েবসাইট উন্নয়ন, গ্রাফিকস ডিজাইন প্রভৃতি। এ ক্ষেত্রে কাউকে অগ্রিম টাকা দিতে হয় না।
ফ্রিল্যান্সার জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে আউটসোর্সিংয়ের ধারণাটি এতটা স্পষ্ট নয়। আবার অনেকেরই ইন্টারনেট সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নেই। ফলে অনেকেই না বুঝেই প্রতারিত হচ্ছেন।’
কাজী আনিছ , দৈনিক প্রথম আলো তাং- ৯ ্নভেম্বর‘১২.

0 comments:

Post a Comment