Translate

Sunday, January 13, 2013

বয়সকে হার মানালেনশ্যামনগরের রতন গাছি


বয়সকে হার মানালেনশ্যামনগরের রতন গাছি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, দৈনিক ইত্তেফাক তাং ১৩/০১/১৩
বয়সের কাছে সকলকে হার মানতে হয় এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মকে হার মানিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের গাছি রতন রফতান ওরফে রতন কালা (১০৪)। শত আয়ু পার করেও রতন নিজের রোজগারে সংসার চালান। এ বয়সে যে পেশাকে তিনি আঁকড়ে ধরে আছেন, তা খুবই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণও বটে। 

গাছ কাটা বা পরিষ্কার করার দরকার পড়লে উপজেলার সদরের গোপালপুর, কাঁচড়াহাটি, সোনমুগারী, বাদঘাটা, কুলখালিসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে রতন কালার শরণাপন্ন হতে হয়। রতন কালাই এলাকার একমাত্র গাছি অর্থাত্ নারকেল গাছ, তালগাছ ঝোড়া (পরিষ্কার করা) এবং তাল গাছ ও খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করার পেশায় জড়িত। ৪৮ বছর বয়সে কঠিন এক অসুখে পড়ে দুটি কানে আর শুনতে পান না বললেই চলে। তবে ইশারায় সবকিছুই বুঝতে পারেন। গত শনিবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শৈত্যপ্রবাহের কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে ভোরবেলায় নিজ বাড়ির আঙিনায় খেজুর গাছ থেকে রসের ভাড় নামাচ্ছে। এ এলাকায় আগের দিনের মত আর গাছি খুঁজে পাওয়া যায় না। যারা ছিল তারা এ কঠিন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু রতন কালা তার দীর্ঘদিনের পেশা ছাড়তে রাজি না। 

তিন পুত্র, এক কন্যা সন্তানের জনক রতন। বড় পুত্র কালিপদ রফতান, মেজ পুত্র মন্টু রফতান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ছোট পুত্র মন্টু রফতান (৪৮) দিন মজুরের কাজ করে। একমাত্র কন্যা সীতা রানী তার সংসারে মা অনিমা রফতানকে (৯০) নিয়ে বসবাস করে। এ বয়সে প্রতিদিন ভোরে গাছ ঝোড়া বা রস সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে বের হন রতন। যত উঁচু গাছই হোক না কেন রতন কালার কাছে যেন তা কোন ব্যাপারই না। তিনি নারিকেল গাছ ঝুড়তে গাছপ্রতি ২০ টাকা, খেজুর গাছ ২০ টাকা, তালগাছ ৫০ টাকা। এছাড়া রসের জন্য প্রতিদিন গাছপ্রতি (খেজুর) ৮-১০ টাকা, (তালগাছ) ২০ টাকা হারে পেয়ে থাকেন। রতন বলেন, ''কাজ না করলি মরে যাব, রোগ হবে''। স্ত্রী অনিমা জানান, অসুখ হলে গাছ-গাছড়ার ঔষধ ছাড়া অন্য কোন চিকিত্সা তারা নেন না। একগাল হেসে রতন বলেন, 'এখনকার ছেলেপিলেরা কাজ করে না তাই তাগো অল্প বয়সে রোগ বেরাম হয়। রতনের ভাষ্যে শরীর ভাল রাখতে গেলে নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রম করতে হবে।

0 comments:

Post a Comment