Translate

Monday, August 26, 2013

ডিসেম্বরে বিপিএল হবে

 ডিসেম্বরে বিপিএল হবে

পেসারদের প্রস্তুতি : বালুর ওপর লাঠি নিয়ে কসরত! চর দখলে যাওয়া কোনো লাঠিয়াল বাহিনীর ছবি নয় এটি, বরং ক্রিকেট দলের পেসারদের প্রস্তুতি। মাঠের ক্রিকেটটা শানিত করতে জাতীয় দলের ক্যাম্পে নতুন এই ড্রিল কাল করছেন মাশরাফি-শফিউল-নাজমুলরা। ছবি : মীর ফরিদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ম্যাচ পাতানোর তদন্তে সহায়তার কারণে প্রশংসার দাবিদার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আর কোনো দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের কাছ থেকে ক্রিকেট জুয়ার তদন্তে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ (আকসু) এতটা সহযোগিতা পেয়েছে বলে জানা নেই। কিন্তু সেই বিসিবিই ডিসেম্বরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসর আয়োজনে তৎপর। যদিও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের অনেকেই সাধারণের সঙ্গে একমত যে সুষ্ঠু অবকাঠামো নিশ্চিতকরণের আগে বিপিএল আয়োজনের কোনো প্রয়োজনই নেই।

বিপিএলকে ঘিরে এত কাণ্ড-কীর্তির কারণে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে টুর্নামেন্টের এবারের আসর যেন টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আয়োজন করা হয়। তাতে খেলোয়াড়দের দেনা-পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি টুর্নামেন্টটি আয়োজনের ক্ষেত্রে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, সেসব মিটিয়ে ফেলা যাবে। কিন্তু মে মাসের বোর্ড সভায় এ মৌসুমের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে বিপিএল এগিয়ে আসে বিশ্বকাপের আগে, এ বছরের ডিসেম্বরে। টুর্নামেন্টটি এগিয়ে আনার পক্ষে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের যুক্তি ছিল যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্যই এ ফরম্যাটের একটি টুর্নামেন্ট খেলা দরকার। বোর্ড সভাপতির কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন প্রস্তুতির সুফল মেলার কোনো অতীত নেই। যেমন ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ক্রমাগত ওয়ানডে খেলেও ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিরন্তর ২০ ওভারের ক্রিকেট খেলে সেই একই দুর্দশা হয়েছে মুশফিকুর রহিমদের। আর যদি প্রস্তুতিই একমাত্র উপলক্ষ হয়ে থাকে, তাহলে জাতীয় লিগের দলগুলোকে নিয়েই আয়োজন করা যেত একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, অতীতে এমনটা হয়েছেও।

কিন্তু বিপিএল বিশ্বকাপের আগেই করতে হবে- এমন মরণপণ প্রতিজ্ঞা এ টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব আই এইচ মল্লিকের। আকসুর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি জোর দাবি করেন যে অন্য কোনো কারণে বিপিএল পেছাতে পারে। তবে সে পেছানোতে আকসুর তদন্ত প্রতিবেদনের কোনো প্রভাব থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে আকসুর তদন্ত প্রতিবেদনই যথাসময়ে বিপিএল আয়োজনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন বোর্ডেরই বড় একটি অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্মকর্তার আশঙ্কা, 'আগের দুই আসরকে ঘিরেই দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় বিপিএল-সংক্রান্ত অনেক নেতিবাচক খবর বেরিয়েছে। এত দিন সেসব ছিল ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গড়িমসি। এখন পুরো বিশ্ব জানে যে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সদলবলে ম্যাচ পাতিয়েছিল। এতে কোনো কোনো বোর্ড মনে করতেই পারে যে এমন টুর্নামেন্টে খেলোয়াড় পাঠিয়ে না আবার কোনো বদনাম কিনে আনে!'

তাঁর আশঙ্কা অমূলক নয়। ইংল্যান্ডের পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন পিসিএর প্রধান নির্বাহী প্রকাশ্যেই বলেছেন, 'পারিশ্রমিক না পেলে খেলোয়াড়দের মাঝে ভুল করার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে কারণে গত বছরই খেলোয়াড়দের বলেছিলাম যে তারা যেন বিপিএলে না যায়।' এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এবার বিপিএল-বিরোধী অবস্থানে আরো কঠোর হবে পিসিএ। গুঞ্জন আছে, অপবাদ থেকে গা বাঁচাতে বিপিএলে নিজ দেশের ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড। ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফিকার পরামর্শে পিছিয়ে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররাও।

বোর্ডের ওই কর্মকর্তার দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ অবশ্য বিদেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নয়। তাঁর চিন্তার স্রোত আরো গভীরে, 'বিপিএলটা তড়িঘড়ি আয়োজন করা হয়েছিল। সেটা করতে গিয়ে কিছু ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। আমিও চাই বিপিএল হোক, কিন্তু সে ভুলগুলো আগে শুধরে নিলে ভালো।' সে ভুলগুলোর বিস্তারিত অবশ্য বলেননি তিনি। তবে ক্রিকেট ঘনিষ্ঠদের কাছে ওই ভুলগুলো আর গোপন কিছু নয়। প্রথমত, বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বোর্ড কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতায় বিধিনিষেধ আরোপ করেনি বিসিবি। স্বয়ং বোর্ড সভাপতির মেয়ে বনে যান একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক। দ্বিতীয়ত, তড়িঘড়ি টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে গিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি মনোনয়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেনি বিসিবি। এ সুযোগে বিপিএলের মতো আলোচিত টুর্নামেন্টে দলের মালিক বনে যায় এমন কিছু প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি, যাদের মনে নেতিবাচক কোনো প্রচারণায় সামান্যতম হেলদোল দেখা যায়নি। পরিস্থিতি এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে ম্যাচ পূর্ববর্তী কিংবা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারের কাছে করা একটি প্রশ্ন ছিল অবধারিত, 'আপনি পারিশ্রমিক পেয়েছেন কি?' একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতিটি ম্যাচ-পূর্ব টিম মিটিংয়ের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, 'টাকা না পেলে কালকের ম্যাচে নামব না।' গত আসরে এক ম্যাচের আগে বয়কট করে বসেছিলেন দুরন্ত রাজশাহীর সাত বিদেশি ক্রিকেটার। সিলেট রয়্যালসকে নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিকুর রহিমের উষ্মা, 'পাওনা চাইতে গিয়ে কোনো মালিককেই খুঁজে পাচ্ছি না!' এমন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বিসিবির কাঁধে চেপে বসেছে গেম অন নামক উৎপাত।

তাই দায়িত্ব গ্রহণের পর বিসিবির বর্তমান সভাপতিই বলেছিলেন, 'বিপিএল একটা পেইন।' সেই 'পেইন' না সারিয়েই ডিসেম্বরে বিপিএল আয়োজনে উন্মুখ বিসিবি!
সূত্র -    কালের কন্ঠ।

0 comments:

Post a Comment