Translate

Saturday, March 23, 2013

ঋতু বদলের অসুখ


ঋতু বদলের অসুখ

সময়ের হিসাবে বসন্ত চলছে। কিন্তু এখনো মাঝে মধ্যে শীত শীত লাগে, মাঝে মধ্যে গরমও। তাপমাত্রার এ দোলাচলে শরীরও ঠিক মানিয়ে নিতে পারছে না।
যারা বেশি আক্রান্ত হয়
ষ নবজাত শিশু ষ এক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশু ষ স্কুলপড়–য়া শিশু
ষ বয়স্ক মানুষ (৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে) ষ যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট (অ্যাজমা) বা যক্ষ্মা বা বক্ষব্যাধি আছে ষ ক্যান্সারে আক্রান্ত ও রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি চলছে যাদের ষ যাদের লিভার সিরোসিস রয়েছে ষ ডায়াবেটিস রোগী ষ হার্টের রোগী ষ যারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করে না ষ গর্ভবতী নারী
যে ধরনের অসুখ হয়
ঋতু পরিবর্তনের এ সময় সাধারণত হয়ে থাকেÑ
ষ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ষ পেটের অসুখ ষ চর্মরোগ
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা
ঋতু পরিবর্তনের সময় মানুষ সর্বাধিক আক্রান্ত হয় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায়।
কেন হয়
ষ তাপমাত্রার ওঠানামার সাথে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেম হঠাৎ করে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে মানুষ আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে শিশুরা, যাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেমটি যথেষ্ট কার্যকর নয়। ষ তাপমাত্রার পরিবর্তন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বা ইমিউন সিস্টেম আক্রান্ত করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে যারা শিশু ও বৃদ্ধ অথবা যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি অসুখের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। ষ এ সময় পানি খাওয়া কম হয় বলে শরীরে পানিশূন্যতা থাকে এবং শ্বসনতন্ত্র থেকে যে প্রতিরোধক ব্রংকিয়াল নিঃসরণ হয়, যা শ্বাসনালীর ভেতরের জীবাণুকে বের করে দেয়, তা শুকিয়ে যায়। ফলে জীবাণু বের হতে পারে না এবং সহজেই বিস্তার লাভ করে। ষ এ সময় বাতাস অত্যন্ত শুষ্ক থাকে, ফলে প্রশ্বাসের বায়ু প্রয়োজনীয় পরিমাণে আর্দ্র হতে পারে না। এর ফলে জীবাণু শ্বাসতন্ত্রের ভেতরে ঢোকে ও বিস্তার লাভ করে। ষ শুষ্কতার জন্য ধুলাবালি বেড়ে যায় বলে অ্যাজমার প্রকোপ বাড়ে।
কী লক্ষণ থাকে
ষ জ্বর ষ তীব্র কান্তি ষ কাশি ও গলা ব্যথা ষ নাক দিয়ে পানি পড়া  ষ নাক বন্ধ হয়ে থাকা ষ মাথাব্যথা ষ পা ব্যথা এ সমস্যাগুলো কখনো জটিল আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
যা করতে হবে
ঋতু পরিবর্তনের সমস্যাগুলো এড়াতে যা করতে পারি
ষ এ সময় গরম লাগলেও শিশু ও বয়স্করা পাতলা কাপড় পরে থাকবেন না। শীত পুরোপুরি চলে না যাওয়া পর্যন্ত গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। ষ ফু খুব ছোঁয়াচে, তাই এ সময় পিকনিকে যাওয়া ও মেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম তারা এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলুন। ষ শিশুরা ফুতে আক্রান্ত হলে স্কুলে যেতে দেবেন না। এতে অন্য শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ষ হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন। ষ এ সময় অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তাই সব সময় ইনহেলার সাথে রাখুন। ধুলায় সমস্যা হলে বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন। ষ পানি বেশি পান করতে হবে। দিনে অন্তত দুই লিটার (আট গ্লাস) পানি পান করুন, যাতে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি না হয়। ষ ধূমপান করবেন না। ষ প্রচুর তাজা শাকসবজি ও ফল খান, বিশেষ করে টক ফল যেমনÑ লেবু, বরই, কমলা। ষ দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন এবং খালি হাতে ব্যায়াম করুন।
পেটের অসুখ
এ সময়টায় পেটের অসুখ বেশি হয়।
কেন হয়
ষ এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। ষ শীতের সময় ফ্রিজে খাবার রাখার প্রবণতা কমে কিন্তু হালকা গরম ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বাইরে রেখে দেয়া খাবার সহজেই জীবাণু আক্রান্ত হয়। ষ এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে সহজেই অন্যজন আক্রান্ত হয়।
যে ধরনের জীবাণু দিয়ে অসুখ হয়
সাধারণত রোটা ভাইরাস (পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে), এডেনো ভাইরাস দিয়ে পেটের পীড়া হয়।
যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায়
ষ পানির মতো পাতলা পায়খানা ষ বমি ষ জ্বর ষ মাথা ও শরীর ব্যথা ষ পেট ব্যথা
কত দিন অসুখ থাকে
একবার আক্রন্ত হলে এ অসুখ এক থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
যা করতে হবে
ষ বাইরের খোলা খাবার ও কেটে রাখা ফল খাওয়া যাবে না। ষ রান্না করার আগে ও শিশুদের খাওয়ানোর আগে হাত ভালোমতো সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ষ ডায়রিয়া ও বমির সময় শিশুকে সাবধানতার সাথে (খাদ্যদ্রব্যের সাথে যেন জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটে) খাওয়াতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি বা ফুটানো পানি পান করতে হবে।
টিকা
রোটা ভাইরাসের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, যা শিশুদের দেয়া হয়। নিজ উদ্যোগে এ টিকা নিতে হয়। সরকারিভাবে এখনো দেয়ার ব্যবস্থা নেই।
চিকিৎসা
সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই যুক্তিযুক্ত। তবে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে পানিশূন্যতা রোধ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রে।
চর্মরোগ
ঋতু পরিবর্তনের এ সময়টায় চামড়ায় বেশ কিছু রোগ দেখা দেয়। এর অনেকটাই ঋতু পরিবর্তিত হয়ে গেলে ঠিক হয়ে যায় আপনাআপনি। তবে কিছু রোগের চিকিৎসা না করালে অনেক দিন ভোগাতে পারে।
চর্মরোগ কেন হয়
ষ এ সময় বাতাস শুষ্ক থাকায় ত্বকে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং আর্দ্রতার অভাবে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। এতে চুলকানি বেড়ে যায়। চুলকানোর সময় নখের আঁচড়ের সাথে জীবাণু চামড়ার ভেতরে ঢুকে পড়ে। ষ অনেকেই শীতকালের অভ্যাস হিসেবে গরম পানি দিয়ে গোসল করা অব্যাহত রাখে। গরম পানি ত্বক নরম করে দেয়, ফলে ত্বক ফাঙ্গাস ও অন্যান্য জীবাণু সহজেই অনুপ্রবেশ করতে থাকে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফাঙ্গাস ইনফেকশন দেখা দেয়। ষ রোদের তীব্রতার কারণে শরীর ঘেমে যায় এবং এ ঘাম জমে চর্মরোগ হয়। ষ এ সময় ধুলা ও বাতাসে ভাসমান ফুলের রেণুর প্রভাবে ত্বকের সেবাম নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা জমে গিয়ে চর্মরোগ হয়। ষ আগের সোরিওসিস একজিমা বা স্ক্যাবিসের মতো চর্মরোগ এ সময় বেড়ে যায়। ষ মাথার স্কাল শুষ্ক হয়ে এ সময় খুশকি হতে দেখা যায়।
করণীয়
ষ পানি ও অন্যান্য তরল বেশি পান করতে হবে। ষ ভিটামিন সি-যুক্ত ফল যেমনÑ লেবু, কমলা ইত্যাদি খেতে হবে। ষ গরম পানি দিয়ে গোসল করলে সাবান ব্যবহার করতে হবে। ষ গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ষ পরিবারের কারো চুলকানি থাকলে তাকে ধরার পর সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তাদের সাথে গামছা বা তোয়ালে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। ষ অন্তর্বাস পরিষ্কার রাখতে হবে। ষ যেকোনো ধরনের চর্মরোগ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো কিছু অসুখ এ হয় সময়। যেমনÑ
ষ কনজাংটিভিটিস ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া ষ এনকেফালাইটিস ষ জন্ডিস ষ ডিপ্রেসিও ইলনেস
 ডা: এ কে এম মোশারফ হোসেন, লেখক : অধ্যাপক, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
দৈনিক নয়াদিগন্ত তারিখ: ২৪ মার্চ, ২০১৩

0 comments:

Post a Comment